অনলাইন ডেস্ক:
বর্ষা ও শরৎকালে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বাড়ে
বর্ষা মানেই এডিস মশার উৎপাত, আর সেই সঙ্গে দেখা দেয় দুই ভয়ংকর রোগ—ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া। দুটি রোগের বাহক একই মশা হলেও (এডিস ইজিপ্টি), লক্ষণগুলো অনেক ক্ষেত্রে এতটাই কাছাকাছি যে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিকভাবে লক্ষণগুলো পর্যবেক্ষণ করলে এই দুই রোগকে আলাদা করে চেনা সম্ভব।
ডেঙ্গু জ্বর: হাড়ভাঙা ব্যথার সঙ্গে তীব্র জ্বর
ডেঙ্গু হলে রোগী হঠাৎ করেই উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরে আক্রান্ত হন।
- তীব্র জ্বর: সাধারণত ১০২ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে।
- মাথাব্যথা: চোখের পেছনে ও কপালে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
- মাংসপেশি ও জয়েন্টে ব্যথা: শরীরের হাড় ও পেশিতে এমন ব্যথা হয় যে একে অনেক সময় “হাড়ভাঙা জ্বর” বলা হয়।
- ত্বকে র্যাশ: জ্বর শুরুর ৪–৭ দিনের মধ্যে শরীরে লালচে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
- বমি বমি ভাব: হজমে সমস্যা, বমি বা ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে।
- রক্তক্ষরণ: গুরুতর ডেঙ্গু হলে দাঁতের মাড়ি, নাক বা প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে।
চিকুনগুনিয়া জ্বর: দীর্ঘস্থায়ী অস্থিসন্ধির ব্যথা
চিকুনগুনিয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো অস্থিসন্ধির প্রচণ্ড ব্যথা।
- জ্বর: ডেঙ্গুর মতোই উচ্চ জ্বর হয়, তবে সাধারণত ২–৩ দিনের মধ্যেই কমে যায়।
- অস্থিসন্ধির ব্যথা: হাতের আঙুল, কবজি, গোড়ালি, হাঁটু—সব অস্থিসন্ধিতেই অসহনীয় ব্যথা হয়, যা কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
- মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা: থাকে, তবে ডেঙ্গুর মতো তীব্র নয়।
- ত্বকে র্যাশ: জ্বর শুরুর ২–৫ দিনের মধ্যে লালচে র্যাশ দেখা দেয়।
- চোখে প্রদাহ: চোখ লাল হয়ে যায়, ব্যথা অনুভূত হয়।
- বমি বমি ভাব: কখনো কখনো দেখা যায়।
মূল পার্থক্য: কোথায় বুঝবেন ডেঙ্গু, কোথায় চিকুনগুনিয়া?
- ডেঙ্গুতে হাড় ও পেশির ব্যথা জ্বরের সময় তীব্র হয়, কিন্তু জ্বর কমলে ব্যথা অনেকটাই সেরে যায়।
- চিকুনগুনিয়াতে অস্থিসন্ধির ব্যথা অসহনীয় রূপ নেয় এবং জ্বর চলে যাওয়ার পরও দীর্ঘদিন থাকে।
- ডেঙ্গুতে গুরুতর হলে রক্তক্ষরণ দেখা দেয়, চিকুনগুনিয়াতে সাধারণত তা হয় না।
- চিকুনগুনিয়াতে চোখে প্রদাহ, হাত-পায়ে শক্তভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঝুঁকি নয়
চিকিৎসকেরা বলছেন, নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক নয়। কেননা, অনেক সময় লক্ষণ মিললেও রোগ ভিন্ন হতে পারে। সঠিক রক্ত পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যায় না কোন রোগ হয়েছে।
করণীয়:
- প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার পান করতে হবে।
- সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
- কোনোভাবেই নিজে থেকে ব্যথানাশক বা এন্টিবায়োটিক খাবেন না।
- দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি?
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতিবছরই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া মহামারীর আকার ধারণ করে। অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ন, ড্রেনেজ সমস্যায় পানি জমে থাকা, আর মানুষের অসচেতনতা মিলিয়ে এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে। অথচ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বাড়ালে রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমানো সম্ভব।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া দুটোই মারাত্মক। তবে সচেতন থাকলে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো যায়। বর্ষাকাল এলেই তাই আমাদের সবার উচিত—নিজের বাড়ি, আশপাশ ও কর্মস্থল পরিষ্কার রাখা এবং মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা।
