নুরাল পাগলার দরবার থেকে জেনারেটর চুরি: যুবক গ্রেফতার

নুরাল পাগলার দরবার থেকে জেনারেটর চুরি ও যুবক গ্রেফতার – রাজবাড়ী পুলিশ অভিযান রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

রাজবাড়ীতে বড়সড় অভিযানে পুলিশের সাফল্য

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় আলোচিত নুরাল পাগলার দরবার থেকে জেনারেটর চুরির ঘটনায় অবশেষে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজীব সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


অভিযুক্ত গ্রেফতার

গ্রেফতারকৃত যুবকের নাম মো. মিজানুর রহমান (২৪)। তিনি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদের ছেলে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব জানান, সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে নুরাল পাগলার দরবার থেকে জেনারেটরটি নিয়ে যান মিজানুর রহমান। পরে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়ন এলাকায় ডিবি ও গোয়ালন্দ থানার পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার হেফাজত থেকেই চুরি হওয়া জেনারেটরটি উদ্ধার করা হয়েছে।


মামলার পটভূমি

এর আগে নুরাল পাগলার দরবারে ভক্ত রাসেল মোল্লা নিহত হওয়ার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন নিহতের বাবা আজাদ মোল্লা।

  • অভিযোগ: হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, ক্ষতিসাধন, চুরি ও জখম।
  • মামলাটি দায়ের করা হয় সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানায়।

পুলিশ জানায়, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


নুরাল পাগলার দরবারে হামলার ঘটনা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে।

  • বিক্ষুব্ধ জনতা: “ঈমান-আকিদা রক্ষা কমিটি”-এর ব্যানারে তারা দরবারে হামলা চালায়।
  • ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ: দরবারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়।
  • সংঘর্ষ: দরবারের ভক্ত ও স্থানীয় জনতার মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন।
  • নিহত: নুরাল পাগলার ভক্ত রাসেল মোল্লা নিহত হন।
  • পুলিশে হামলা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গেলে পুলিশের ওপরও হামলা হয়, দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এতে ১০–১২ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।
  • অমানবিকতা: পরবর্তীতে হামলাকারীরা নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়।

পুলিশের ভূমিকা ও মামলা

এই ঘটনার পর পুলিশ একাধিক মামলা দায়ের করে।

  • চুরি ও সহিংসতার মামলা: রাসেল মোল্লার হত্যাকাণ্ডের মামলার পাশাপাশি চুরি, অগ্নিসংযোগ ও হামলার অভিযোগে পৃথক মামলা হয়।
  • পুলিশের ওপর হামলার মামলা: একই দিনে ৩,৫০০ জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর স্থানীয় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, ভক্ত হত্যা এবং মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অপরদিকে, পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক আসামিকে গ্রেফতার করায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।


রাজবাড়ীর এ ঘটনা শুধু স্থানীয়ভাবে নয়, সারাদেশে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে অপরাধ যত বড়ই হোক, আইন প্রয়োগকারীরা পিছপা হবেন না। নুরাল পাগলার দরবার থেকে জেনারেটর চুরির ঘটনায় গ্রেফতারকৃত যুবক মিজানুর রহমান ও অন্য আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করা হলে হয়তো কিছুটা হলেও ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার মিলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *