কঙ্গোতে পৃথক নৌ-দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৩ জন, নিখোঁজ অনেকে

কঙ্গোর নদীপথে নৌ-দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করছে স্থানীয়রা। কঙ্গো নদীতে পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৩ জন, নিখোঁজ অনেকে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী। ছবি আলজাজিরা

অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

সূত্র: আল জাজিরা

আফ্রিকার মধ্যাঞ্চলের দেশ কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে (ডিআরসি) আবারও ঘটল ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা। একুয়াটর প্রদেশে বুধবার ও বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। ঘটনাগুলো কঙ্গো নদী ও তার উপনদীতে ঘটে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেশজুড়ে শোকের আবহ তৈরি করেছে এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয়রা।


বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনা

ডিআরসির মানবিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লুকোলেলা এলাকায় কঙ্গো নদীতে যাত্রীবোঝাই একটি বিশাল নৌকা, স্থানীয়ভাবে যাকে ‘হোয়েলবোট’ বলা হয়, হঠাৎ আগুন ধরে যায়। মুহূর্তেই সেটি নদীতে ডুবে যায়।

  • নৌকাটিতে যাত্রী ছিলেন প্রায় ৫০০ জন
  • দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ১০৭ জন
  • জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২০৯ জনকে
  • এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৪৬ জন

এই দুর্ঘটনার পর নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে শোকের ছায়া নেমে আসে। জীবিতরা জানিয়েছেন, নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না বললেই চলে।


বুধবারের দুর্ঘটনা: শিক্ষার্থীদের মৃত্যু

এর আগের দিন বুধবার, একুয়াটর প্রদেশের বাসানকুসু এলাকায় ঘটে আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। একটি মোটরচালিত নৌকা ডুবে যায় যাত্রীবোঝাই অবস্থায়।

  • এতে মারা যান অন্তত ৮৬ জন
  • মৃতদের বেশিরভাগই ছিলেন শিক্ষার্থী
  • কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তা এখনও নিশ্চিত নয়।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, এই দুর্ঘটনার প্রধান কারণ ছিল অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং রাতের অন্ধকারে নৌযান চালনা


মানবিক বিপর্যয়

দুটি দুর্ঘটনায় মিলে এখন পর্যন্ত ১৯৩ জন নিহতের খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজদের সঠিক সংখ্যা অজানা হলেও ধারণা করা হচ্ছে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

গ্রামবাসীরা নদীর তীরে লাশ জড়ো করে শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ছবিতে দেখা গেছে, পরিবারগুলো কাঁদতে কাঁদতে স্বজনদের লাশ শনাক্ত করছে।


স্থানীয়দের ক্ষোভ ও সরকারের ভূমিকা

কঙ্গোতে নৌ-দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রায়শই নৌকাগুলোতে যাত্রী ও মালপত্র অতিরিক্ত বহন করা হয়, কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকে না। স্থানীয় সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর অভিযোগ, সরকার যথাযথ তদারকি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তাদের মতে:

  • নদীপথে যাতায়াত নিরাপদ করার উদ্যোগ নেই।
  • পুরনো ও নড়বড়ে নৌযানগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
  • যাত্রী সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

তারা বলছে, সরকারের অবহেলার কারণে প্রাণহানি আরও বেড়েছে।


কেন ঘন ঘন ঘটে নৌ-দুর্ঘটনা?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কঙ্গোতে নৌ-দুর্ঘটনা নিয়মিত ঘটার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে—

  1. অতিরিক্ত যাত্রী বহন
  2. রাতের অন্ধকারে নৌযান চলাচল
  3. নৌযানের খারাপ অবস্থা
  4. নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব (লাইফ জ্যাকেট নেই)
  5. সরকারি নজরদারি দুর্বল

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই দুর্ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছে। আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্সসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবরটি প্রধানভাবে প্রকাশিত হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, আফ্রিকার নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এমন দুর্ঘটনা থামানো যাবে না।


নিহতদের স্মরণে শোক

কঙ্গোর জনগণ বর্তমানে শোকের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে। নিহতদের মধ্যে শিশু, নারী ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। অনেক পরিবার একাধিক সদস্যকে হারিয়েছে। নদীর পাড়ে শোকাহত মানুষজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় সংগঠনগুলো।


ভবিষ্যৎ করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে, কঙ্গো সরকারের অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

  • নৌযানের নিয়মিত পরিদর্শন
  • অতিরিক্ত যাত্রী বহনে কঠোর শাস্তি
  • নদীপথে আলোকসজ্জা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
  • প্রতিটি নৌযানে লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করা
  • যাত্রী পরিবহনের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি

কঙ্গোর এই দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা দেশটিকে আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে—কেন বারবার একই ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না সরকার? একদিকে শত শত প্রাণহানি, অন্যদিকে শোকাহত পরিবারগুলোর আর্তনাদ। এখন সময় এসেছে নৌ-খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার লাগাম টেনে ধরার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *