জাকসু নির্বাচন: ১৫ কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষ, ফল দুপুরে আসছে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচন চলাকালে ভোট গণনার দৃশ্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচনের ১৫ কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষ, দুপুরে আসছে চূড়ান্ত ফলাফল। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দীর্ঘ প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মোট ২১ কেন্দ্রের মধ্যে ১৫ কেন্দ্রের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। দুপুরের মধ্যেই প্রকাশ পাবে চূড়ান্ত ফলাফল। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লুৎফুল এলাহী।

শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার বাস্তবায়নে এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘিরে নানা নাটকীয় পরিস্থিতি, অভিযোগ ও বয়কটও হয়েছে, যা ফলাফল ঘোষণাকে ঘিরে আরও আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে।


ভোট গণনার অগ্রগতি

শনিবার সকাল ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ভোট গণনার বড় অংশ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কেন্দ্রগুলোর গণনা শেষ হলে দুপুর ২টার মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

  • মোট ভোটার সংখ্যা: ১১,৮৯৭ জন
  • ছাত্র ভোটার: ৬,১১৫ জন
  • ছাত্রী ভোটার: ৫,৭২৮ জন
  • মোট ভোটাধিকার প্রয়োগ: প্রায় ৬৭-৬৮%

এই অংশগ্রহণের হার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও সক্রিয়তার প্রমাণ।


ভোটগ্রহণের দিন

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটদান। এরপর রাত সোয়া ১০টার দিকে শুরু হয় ভোট গণনা। টানা তিন দিন গণনার পর নির্বাচনী কমিশন শনিবার ফলাফল প্রকাশের ঘোষণা দেয়।


নির্বাচন ঘিরে নাটকীয়তা ও বিতর্ক

এই নির্বাচনকে ঘিরে নানা নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন শুরুর আগেই ছাত্রদলসহ চারটি প্যানেল নির্বাচন বয়কট করে। তাদের অভিযোগ ছিল—

  1. লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই
  2. নানা অনিয়ম হয়েছে
  3. বিরোধীদলীয় সমর্থকদের হয়রানি করা হয়েছে

এমনকি বিএনপিপন্থি চার শিক্ষক, যারা প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনে যুক্ত ছিলেন, তারাও দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে একজন কমিশনারও ছিলেন।


জাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি ও নেতৃত্ব গঠনের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হলো জাকসু। দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

  • শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা
  • বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সংলাপ
  • শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা

এ নির্বাচন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক নয়, বরং ভবিষ্যতের জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রও তৈরি করে।


নির্বাচনের ইতিবাচক দিক

  • ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক বেশি
  • ভোটগ্রহণ ছিল শান্তিপূর্ণ
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ

নেতিবাচক দিক

  • প্যানেল বর্জন
  • অভিযোগের পাহাড়
  • কমিশনের পদত্যাগ

এসব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।


শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যুক্ত হলো। তবে বর্জন ও অভিযোগের কারণে কিছুটা নেতিবাচক ছাপও রয়ে গেছে। কেউ কেউ আবার আশাবাদী, ফলাফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।


ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর নতুন নেতৃত্ব গঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা—

  • সবার জন্য সমান সুযোগ
  • শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করা
  • বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিতে সুস্থ সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা

নতুন কমিটির ওপর ভরসা রাখছেন শিক্ষার্থীরা।


জাকসু নির্বাচনকে ঘিরে যে নাটকীয়তা ও চ্যালেঞ্জ দেখা গেছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ হিসেবেই দেখা উচিত। দুপুরের পরই ফলাফল হাতে আসবে, আর তা শিক্ষার্থীদের নতুন নেতৃত্বের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *