অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের সাতরাস্তা মোড়ে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছে কারিগরি শিক্ষার্থীরা। নিজেদের নানান দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা সড়ক অবরোধ করে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে অবস্থান নেয়। এতে পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে গুলি ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা তাদের দীর্ঘদিনের কিছু দাবিও তুলে ধরেন।
শিক্ষার্থীদের মূল দাবি
১. হাইকোর্টে বাতিল হওয়া ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতি ও নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করা।
২. ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে বয়ঃসীমাহীন ভর্তির সুযোগ বন্ধ করে আধুনিক চার বছর মেয়াদি কারিকুলাম চালু করা।
৩. ধাপে ধাপে ইংরেজি মাধ্যমে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নেওয়া।
৪. ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বাদ দিয়ে নিম্ন পদে নিয়োগ বন্ধে আইনগত পদক্ষেপ।
৫. কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবলকে কারিগরি সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিষিদ্ধ করা।
৬. শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী দ্রুত নিয়োগ দেওয়া।
৭. স্বতন্ত্র “কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়” গঠন।
৮. “কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন” গঠন।
৯. উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।
১০. নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মাণাধীন প্রকৌশল কলেজগুলোতে অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালু করে ভর্তি নিশ্চিত করা।
আন্দোলনের পটভূমি
কারিগরি শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে চাকরিতে বৈষম্য, আধুনিক কারিকুলামের অভাব এবং পদোন্নতি নিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। তাদের দাবি, দেশের শিল্প ও প্রযুক্তি খাতকে শক্তিশালী করতে হলে কারিগরি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, মানসম্মত শিক্ষা, পর্যাপ্ত ল্যাব এবং দক্ষ শিক্ষকের।
প্রভাব
সকালে শিক্ষার্থীরা সাতরাস্তা অবরোধ করে স্লোগান দিতে শুরু করলে পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েন, অনেকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন। ব্যবসা-বাণিজ্যও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকারের অবস্থান
এদিন দুপুরে সচিবালয়ে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ও ডিপ্লোমাধারীদের দাবির যৌক্তিকতা যাচাই করতে গঠিত কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সরকার জানিয়েছে, তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করবে এবং যৌক্তিক অংশগুলো বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবে।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন দেশের প্রযুক্তি শিক্ষা ও চাকরির কাঠামোতে নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। তাদের দাবি বাস্তবায়ন হলে কারিগরি শিক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এর আগে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান জরুরি।
