নুরাল পাগলের মাজারে হামলা: গ্রেফতার ৫, রাজবাড়ীতে উত্তেজনা অব্যাহত

রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলের দরবারে হামলার পর পুলিশের টহল নুরাল পাগলের দরবারে হামলার ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতাসহ ৫ জন গ্রেফতার।

অনলাইন ডেস্ক:

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলের দরবারে হামলার ঘটনায় পুলিশের যৌথ অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় দুই নেতা রয়েছেন। হামলার ঘটনায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, সদস্যদের আহত হওয়া এবং মরদেহ উত্তোলন ও পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল।

গ্রেফতারকৃতদের পরিচয়

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে গোয়ালন্দঘাট থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানে গ্রেফতার হন:

  • গোয়ালন্দ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক হিরু মৃধা,
  • উজানচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাসুদ মৃধা,
  • শাফিন সরদার, এনামুল হক জনি, এবং কাজী অপু

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীব রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

মামলার পটভূমি

এর আগে শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দঘাট থানায় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, হামলার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ, গাড়ি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

হামলার সূত্রপাত

স্থানীয় সূত্র জানায়, নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল ২৩ আগস্ট মারা যান। পরে তাঁর ভক্তরা দরবারের ভেতরেই তাকে দাফন করে এবং কবরের ওপর প্রায় ১০-১২ ফুট উঁচু একটি স্থাপনা নির্মাণ করে, যা সৌদি আরবের কাবা শরীফের মতো দেখতে। এ নিয়ে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র আপত্তি দেখা দেয়।

কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলতে থাকায় শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা দরবারে হামলা চালিয়ে স্থাপনা ভেঙে ফেলে। শুধু তাই নয়, কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে পুড়িয়ে দেয় তারা।

সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা

হামলার সময় নুরাল পাগলের অনুসারী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ বাঁধে। এতে একজন নিহত হন এবং দুই পক্ষের অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশও হামলার শিকার হয়। পুলিশের ১০ থেকে ১২ জন সদস্য আহত হন এবং একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

পুলিশের ভূমিকা

পুলিশ জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হলেও সহিংসতার মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এলাকায় এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনায় স্থানীয় জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ভক্তদের পক্ষ থেকে কবরের ওপর বিতর্কিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। অপরদিকে, হামলাকারীদের বর্বরোচিত আচরণও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের নাম আসায় ঘটনাটি নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নাম যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি কেন্দ্রীয় পর্যায়েও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনায় দলীয় ভাবমূর্তির ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

পরবর্তী করণীয়

পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় জড়িত আরও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। যারা এই ভয়াবহ সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

সার্বিক পরিস্থিতি

রাজবাড়ীর সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ সমাধান চান। তবে ঘটনাটি এলাকায় ধর্মীয় আবেগ, রাজনীতি ও সামাজিক বিভাজনের জটিলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসনকে এখন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিতে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *