অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রতীক্ষিত এই ভোটযুদ্ধ। প্রচারের শেষ সময়ে এসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এক বিষয়—ছাত্রীদের ভোটই জয়–পরাজয়ের চূড়ান্ত হিসাব নির্ধারণ করবে।
ছাত্রীদের গুরুত্ব বাড়ছে কেন?
ডাকসুর মোট ভোটারের প্রায় ৪৮ শতাংশই ছাত্রী। প্রায় অর্ধেক ভোট নারী শিক্ষার্থীদের হাতে থাকায় তাঁদের সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে কোন প্যানেল বিজয়ী হবে। প্রার্থীরা নিজেরাই স্বীকার করছেন, ছাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে না পারলে নির্বাচনী লড়াই জেতা কঠিন।
ছাত্রীদের ভোটকেন্দ্রে আনা যে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, সেটি স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা সরাসরি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “ডাকসুতে ছাত্রীরাই ব্যবধান গড়ে দেবেন।”
ইশতেহারে ছাত্রীদের অগ্রাধিকার
বিভিন্ন প্যানেল ইশতেহারে ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
- আবাসন সংকট নিরসন: অনেক হলে এখনও ‘ওয়ান বেড, ওয়ান স্টুডেন্ট’ নীতি বাস্তবায়ন হয়নি। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে এই ব্যবস্থা চালু করবেন।
- নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা: প্রতিটি প্যানেল নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা জোরদারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেছেন, “নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”
- সাইবার বুলিং প্রতিরোধ: অনলাইনে হয়রানি এখন একটি বড় সমস্যা। সব প্রার্থীরাই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলছেন।

ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশ্রুতি, একই লক্ষ্য
ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেছেন, তাঁরা শুধু আবাসন নয়, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়েও কাজ করবেন। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী উমামা ফাতেমা জোর দিয়েছেন বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতির ওপর। তাঁর ভাষায়, “বাস্তবায়ন করা যাবে না, এমন কিছু ইশতেহারে রাখিনি।”
অপপ্রচার ও নির্বাচনী পরিবেশ
নির্বাচনের উত্তাপের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগও উঠেছে। ছাত্রদলের প্যানেলের এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন যে, তিনটি ফেসবুক গ্রুপ নিয়মিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাঁর দাবি, “মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই অনলাইনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।”
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন যে, সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।

নির্বাচনী বিতর্কে প্রতিশ্রুতির বিশ্লেষণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির আয়োজিত বিতর্কে ভিপি প্রার্থীরা নিজ নিজ ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করেন। ভোটারদের প্রশ্নে উঠে আসে—এই প্রতিশ্রুতিগুলো কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব? অনেক প্রার্থী সোজাসাপটা জবাব দিয়েছেন, “চেষ্টা থাকবে, তবে সবকিছু বাস্তবায়ন নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতার ওপর।”
নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্যালট পেপার প্রস্তুত, ভোট বুথ তৈরি ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে। ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার জন্য বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে।”
জয়–পরাজয়ের মূল চালিকাশক্তি
সবশেষে এসে প্রশ্নটা একটাই—কার দিকে ঝুঁকবে নারী ভোটারদের আস্থা? তাঁদের ভোটই ডাকসুর ভবিষ্যৎ গড়বে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটাই হবে সবচেয়ে বড় “গেম চেঞ্জার।”
মঙ্গলবারের নির্বাচনে দেখা যাবে, কারা ছাত্রীদের মন জয় করতে পেরেছেন আর কারা পিছিয়ে পড়েছেন।
