গাজায় দুই হাজার ৭০০ পরিবার ‘নিশ্চিহ্ন’: অবকাঠামোর ৯০% ধ্বংস, মানবিক বিপর্যয় তীব্র

গাজা শহরের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে খালি বাড়ির ধ্বংস এবং শূন্য রাস্তা গাজার অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস আর দুই হাজার ৭০০ পরিবার সম্পূর্ণ নিধন — মানবতার বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ অবস্থা, ছবি রয়টার্স

অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

গাজা উপত্যকায় দীর্ঘ দুই বছরের সংঘর্ষ ও বায়ু হামলায় নতুন এক ভয়াবহ মাত্রা পেয়েছে মানবিক বিপর্যয়। সরকারি মিডিয়া অফিসের বর্ণনায়, এই অঞ্চলের ২,৭০০টি পরিবার ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গিয়েছে — অর্থাৎ, কোনো সদস্যই বেঁচে নেই। একইসাথে, অবকাঠামোর প্রায় ৯০% ধ্বংস হয়েছে, যা একটি সম্পূর্ণ সিটি বা অঞ্চলকে নির্বাসনে পরিণত করেছে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়, যেখানে তারা ফিলিস্তিনে চলমান ‘জাতিগত নির্মূল’-যুদ্ধের বিরুদ্ধে ‘আন্তর্জাতিক নীরবতা’কে লজ্জাজনক বলে নিন্দা জানিয়েছে।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান সংঘর্ষে গাজার অবকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস হয়েছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলাফল হিসেবে সংঘটিত ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬,৮০০ কোটি ডলার। রাজধানী শহরে ৩৮টি হাসপাতাল, ৮৩৩টি মসজিদ এবং দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিপর্যস্ত হয়েছে।

ইসরাইলি হামলায় যুক্ত ফিলিস্তিনি প্রাণহানিতে আবার একটি নতুন নাটকীয়তা যোগ হয়েছে: শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, পূর্বের দিনের তুলনায় আরও ৬৭ জন নিহত হয়েছেন; তার মধ্যে alone গাজা শহরে নিহত হয়েছে ৪৫ জন—যেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ধরাশায়ী করে শহর দখল ও দক্ষিণে মানবস্রোত সরিয়ে দিচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সংঘটিত এই সংঘাতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ৬৪,৩৬৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এবং আহত হয়েছেন ১,৬২,৩৬৭ জন। এই মৃত্যুর প্রতি তৃতীয়াংশ শিশু ছিল—২০,০০০ এর বেশি ক্ষুদ্র ফিলিস্তিনি প্রাণ এই তাণ্ডবে বিলীন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরাইলি-বিরোধিত দুর্ভিক্ষের প্রভাবে একটি দিনের মধ্যে ছয়জন ফিলিস্তিনি অনাহারে মারা যায়; এতে মোট অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৮২ জন, যার মধ্যে ১৩৫ জন শিশু।

এছাড়া নতুন আগ্রাসনের অংশ হিসাবে গাজা শহরের একের পর এক ‘টাওয়ার ব্লক’ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। মুশতাহা টাওয়ারের পর শনিবার “আল-সুসি আবাসিক টাওয়ার” উড়িয়ে মারার একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই ধ্বংসাত্মক অভিযান আরও চালিয়ে যাওয়ার। তেল-আবিব দাবি করলেও, তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি যে এসব ভবন হামাসের নজরদারিতে ব্যবহার হতো।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ওয়াশিংটন হামাসের সঙ্গে “গঠনমূলক আলোচনা” চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, ভারতে আটক জীবিত জিম্মিদের সংখ্যা হয়তো আরও কমে আসছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন: “জিম্মিদের মুক্তি না দিলে পরিস্থিতি হয়ে উঠবে ভয়াবহ ও অস্থিতিশীল।”

এমন পরিস্থিতি সামনে রেখে আদর্শ ও কূটনৈতিক পর্যায় থেকে আন্দোলন এবং মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় সমন্বিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগ আবশ্যক। গাজায় দীর্ঘদিনের জেলা তথা মানবতার জন্য এক বিপর্যয়কর সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা অবিলম্বে প্রতিকার এবং পুনর্নির্মাণের উদ্যোগের দাবি জানাচ্ছে।

সূত্র: আল জাজিরা, টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *