বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম আবারও বাড়ছে, পৌঁছাতে পারে রেকর্ড উচ্চতায়!

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি – স্বর্ণের বার ও দাম বৃদ্ধির গ্রাফ সুদের হার কমার প্রত্যাশায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নতুন উচ্চতায়, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

বিশ্ববাজারে আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে স্বর্ণের দাম। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ডিসেম্বর মাসে সুদের হার কমাতে পারে—এমন প্রত্যাশা এবং যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ সরকারি অচলাবস্থার অবসানের ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) স্বর্ণের দাম প্রায় তিন সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়।


স্বর্ণের বর্তমান দাম

মঙ্গলবার স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪,১৪২.৮৩ ডলার, যা গত ২৪ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ।
এছাড়া ডিসেম্বর ডেলিভারির মার্কিন ফিউচার মার্কেটেও স্বর্ণের দাম ৪,১৪৮.৫০ ডলার-এ পৌঁছেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধির মূল কারণ হলো সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার পরিবর্তন।


মার্কিন অর্থনীতি ও ফেডের প্রভাব

মার্কিন সিনেট সম্প্রতি ফেডারেল তহবিল পুনরুদ্ধারের একটি চুক্তি অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের “শাটডাউন” অবসান ঘটেছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে নতুন করে আশাবাদ তৈরি হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা দেখছেন।

“মার্কিন শাটডাউন শেষ হওয়ায় বাজারের অনিশ্চয়তা অনেকটা কমেছে,” বলেন টেস্টিলাইভের গ্লোবাল ম্যাক্রোর প্রধান ইলিয়া স্পিভাক। “এখন বাজার বছরের শেষভাগের দিকে ইতিবাচক দিকের প্রত্যাশায় ফিরছে, যা স্বর্ণের দাম আরও বাড়াতে পারে।”


কেন সুদের হার কমলে স্বর্ণের দাম বাড়ে

সুদের হার কমে গেলে ব্যাংকে টাকা রাখার লাভ কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিকল্প হিসেবে স্বর্ণ কেনেন।
অন্যদিকে, উচ্চ সুদের সময় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক বা বন্ডে টাকা রাখতে পছন্দ করেন। তাই ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর ইঙ্গিত স্বর্ণের দামে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।


ফেডের সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত

সিএমই গ্রুপের ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, ব্যবসায়ীরা এখন প্রায় ৬৪% সম্ভাবনা দেখছেন যে ফেড ডিসেম্বর মাসে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদের হার কমাবে
এমনকি ফেড গভর্নর স্টিফেন মিরান বলেছেন, “৫০ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদের হার কমানোও যৌক্তিক হতে পারে, কারণ মুদ্রাস্ফীতি কমছে এবং বেকারত্ব বাড়ছে।”


রেকর্ড ভাঙার পথে স্বর্ণ

এর আগে গত ২০ অক্টোবর প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম পৌঁছেছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪,৩৮১.২১ ডলার-এ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি ফেড সুদের হার কমায় এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ে, তাহলে স্বর্ণের দাম এই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারে।


অন্য মূল্যবান ধাতুর দামও বেড়েছে

  • স্পট সিলভার: বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০.৮০ ডলার/আউন্স
  • প্লাটিনাম: বেড়ে ১,৫৮১.৬০ ডলার/আউন্স
  • প্যালাডিয়াম: বেড়ে ১,৪৩১.৪৫ ডলার/আউন্স

সব ধাতুরই এই বৃদ্ধি নিরাপদ সম্পদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থার ইঙ্গিত দেয়।


বাংলাদেশে এর প্রভাব

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব পড়ে।

  • ডলার শক্তিশালী হলে এবং টাকার মান কমলে স্থানীয় স্বর্ণের দাম আরও বেড়ে যায়।
  • ফলে যারা এখন গয়না বা বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ কিনতে চান, তাদের কিছুটা বেশি দাম গুনতে হতে পারে।
    তবে বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ এখনও নিরাপদ বিকল্প হিসেবে বিবেচিত।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

  • দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করতে পারেন।
  • তবে স্বল্পমেয়াদি ট্রেডারদের উচিত বাজারের ওঠানামা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
  • “কম সুদের হার মানেই স্বর্ণের দাম আরও বাড়বে”—এমন নিশ্চয়তা নেই, কারণ বাজারের অনিশ্চয়তা সবসময় পরিবর্তনশীল।

সারাংশ

স্বর্ণের দাম বেড়ে এখন প্রায় তিন সপ্তাহের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদের হার হ্রাস, যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন সমাপ্তি, এবং বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝোঁক—এই তিনটি কারণ মিলে স্বর্ণের বাজারে নতুন গতি এনেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি পরিস্থিতি এমনই থাকে, তাহলে স্বর্ণ আবারও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *