নিলাম নয়, এমপি কোটার ৩০ বিলাসবহুল গাড়ি যাচ্ছে সরকারের হাতে

চট্টগ্রাম বন্দরে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা এমপি কোটার বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার ও পাজেরো গাড়ি। এনবিআরের সিদ্ধান্তে এমপি কোটার ৩০টি বিলাসবহুল গাড়ি যাচ্ছে সরকারের যানবাহন অধিদফতরে।

অনলাইন ডেস্ক:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমপি কোটায় আমদানি করা ৩০টি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার ও পাজেরো গাড়ি নিলামে বিক্রি না করে সরকারি ব্যবহারে নেওয়া হবে

এই গাড়িগুলোর প্রতিটির দাম বাজারে প্রায় ১২ কোটি টাকা, কিন্তু নিলামে কেউ দিচ্ছিল মাত্র ১ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। এত কম দামে বিক্রি হলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হতো। তাই এনবিআর চূড়ান্তভাবে ঠিক করেছে, গাড়িগুলো সরকারের যানবাহন অধিদফতরের (DGT) অধীনে দেওয়া হবে।


কীভাবে এই গাড়িগুলো এল?

দ্বাদশ সংসদের কিছু সদস্য এমপি কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় এই বিলাসবহুল গাড়িগুলো জাপান থেকে আমদানি করেছিলেন।
কিন্তু সরকারের পতনের পর তারা পালিয়ে যান বা পদ হারান। ফলে গাড়িগুলো বন্দরেই আটকা পড়ে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে এই গাড়িগুলোর দায়িত্ব ছিল। এনবিআর এখন তাদের চিঠি দিয়েছে — গাড়িগুলো যেন সরকারি দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়।


কেন নিলামে বিক্রি হলো না?

প্রথম নিলামে দরকার ছিল অন্তত রিজার্ভ মূল্যের ৬০% দর, কিন্তু কেউ সেটা দেয়নি।
কিছু দরদাতা (বিডার) বলছেন, দাম অনেক বেশি ছিল, তাই তারা অপেক্ষা করছিল দ্বিতীয় নিলামের জন্য।

কিন্তু প্রায় এক বছর অপেক্ষার পর এনবিআর নতুন সিদ্ধান্ত নেয় — এবার আর নিলাম নয়, সরাসরি সরকারই গাড়িগুলো ব্যবহার করবে।

বিডাররা কিছুটা হতাশ, কারণ এতে নিলাম থেকে সরকারের তাত্ক্ষণিক রাজস্ব আসবে না।


এখন গাড়িগুলোর কী হবে?

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ-কমিশনার এইচ এম কবীর জানিয়েছেন,
“শুল্কমুক্ত এমপি কোটার গাড়িগুলো সরকারি যানবাহন অধিদফতরে হস্তান্তর করা হবে। প্রায় ৩০টি গাড়ি রয়েছে, নিয়ম মেনেই হস্তান্তর হবে।”

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এতদিন গাড়িগুলো নিরাপদে রেখেছে, তাই এখন কাস্টমস তাদের গাড়ি রাখার ফি (ফ্রেইট ও ওয়ারফেজ চার্জ) দেবে।


গাড়ির দাম ও তথ্য

  • প্রস্তুতকারক দেশ: জাপান
  • মডেল: ২০২২ সালের ল্যান্ড ক্রুজার ও পাজেরো
  • আমদানি মূল্য: প্রায় ১.৫ কোটি টাকা প্রতি গাড়ি
  • শুল্কসহ বাজারমূল্য: প্রায় ১২ কোটি টাকা
  • মোট গাড়ি: ৩০টি

কারা এনেছিলেন এই গাড়িগুলো?

এই গাড়িগুলো আমদানি করেছিলেন দ্বাদশ সংসদের কিছু সদস্য, যাদের মধ্যে রয়েছেন —
তারানা হালিম, জান্নাত আরা হেনরী, আবুল কালাম আজাদ, সাদিক সুনামগঞ্জ, মুজিবুর রহমান, তৌহিদুজ্জামান, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী প্রমুখ।
তবে সরকার পতনের ঠিক আগে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানব্যারিস্টার সুমনসহ ৭ জন এমপি তাদের গাড়ি ছাড় করে নিয়েছিলেন।


পুরনো জটিলতা

শুধু এই ৩০টি গাড়িই নয়, বন্দরে এখনো ৩০০-র বেশি গাড়ি বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে, যেগুলোও বিভিন্ন কারণে নিষ্পত্তি হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাড়ি সময়মতো নিষ্পত্তি করলে সরকার অনেক রাজস্ব আয় করতে পারত।


এনবিআরের সিদ্ধান্তে একদিকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কমবে, অন্যদিকে বিলাসবহুল গাড়িগুলো রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহার করা যাবে
তবে অনেকে বলছেন, ভবিষ্যতে এমপি কোটায় এমন শুল্কমুক্ত সুযোগ বন্ধ করা উচিত, যাতে রাষ্ট্রের সম্পদ অপচয় না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *