আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

শারজাহতে জয় উদযাপন করছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা — আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন খেলা ডেস্ক:

ঢাকা, ৫ অক্টোবর ২০২৫ :
দীর্ঘ সাত বছর পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে আফগানদের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে টাইগাররা।
রবিবার (৫ অক্টোবর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারায় আফগানিস্তানকে।

২০১৮ সালে ভারতের দেরাদুনে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল আফগানিস্তানের কাছে। ঠিক সাত বছর পর সেই দুঃখের প্রতিশোধ নিয়েছে জাকের আলির নেতৃত্বাধীন দল।


ম্যাচের সারসংক্ষেপ

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করেছিল আফগানিস্তান।
দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান ২ ওভারেই তুলে ফেলেন ২০ রান। কিন্তু তৃতীয় ওভারের শুরুতেই জাদরানকে (৭) ফেরান পেসার শরিফুল ইসলাম

পরের ওভারে স্পিনার নাসুম আহমেদ গুরবাজকে (১২) আউট করেন। এরপর পাওয়ার প্লের শেষ বলে তৃতীয় উইকেট তুলে নেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, যিনি ১১ রানে ওয়াফিউল্লাহ তারাখিলকে বোল্ড করেন।


আফগানিস্তানের ব্যাটিং ধস

মাত্র ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারানো আফগানরা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল সেদিকুল্লাহ আতাল ও দারউইশ রাসুলির ব্যাটে। দুজন মিলে ২৫ বলে ৩৪ রান যোগ করেন।
তবে ২৩ বলে ২৮ রান করা আতালকে ফেরান সাইফুদ্দিন, ফলে দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ৭৩ রানে ৪ উইকেটে।

এর পরপরই আবারও ধস নামে আফগান ব্যাটিংয়ে। একে একে হারায় আরও ৫ ব্যাটার, দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৯৮।


শেষভাগে মুজিবদের প্রতিরোধ

শেষ দিকে দারউইশ রাসুলি (২৯ বলে ৩২) ও মুজিব উর রহমান (১৮ বলে ২৩*) কিছুটা লড়াই করেন।
দুজন নবম উইকেটে ২২ বলে ৩৪ রান যোগ করে আফগানিস্তানকে সম্মানজনক স্কোরে পৌঁছে দেন।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৩ রান করে আফগানিস্তান।

বাংলাদেশের হয়ে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নেন ৩ উইকেট, নাসুম ও তানজিম নেন ২টি করে, আর শরিফুল ও রিশাদ নেন ১টি করে উইকেট।


বাংলাদেশের জয়ের গল্প

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ দারুণ হয় বাংলাদেশের।
দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমনতানজিদ হাসান তামিম ৪ ওভারে ২৪ রান তোলেন।

ইমন ১৬ বলে ১৪ রান করে আউট হলে দ্বিতীয় উইকেটে মাঠে নামেন সাইফ হাসান
তিনি ও তানজিদ মিলে ৩৯ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়েন।
তানজিদ ৩৩ বলে ৩৩ রান করে ফিরলেও ততক্ষণে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় জয়ের পথে।


অধিনায়কের ঠাণ্ডা মাথার ইনিংস

দলীয় ৭৯ রানে তানজিদের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক জাকের আলি
তিনি সাইফ হাসানের সঙ্গে ১৯ বলে ৩০ রান যোগ করেন।
১৩তম ওভারে বাংলাদেশ দলীয় রান তিন অঙ্ক ছোঁয়।

১৪তম ওভারে আফগান স্পিনার মুজিব উর রহমান টানা দুই বলে তুলে নেন জাকের (১০)শামীম হোসেন (০)— ফলে ম্যাচে খানিক উত্তেজনা ফেরে।


সাইফ হাসানের ঝড়

শেষ দিকে দলের হাল ধরেন সাইফ হাসাননুরুল হাসান সোহান
পঞ্চম উইকেটে ২৪ বলে ৩৫ রানের জুটি গড়ে তারা ম্যাচ শেষ করেন ১২ বল হাতে রেখেই।

সাইফ হাসান খেলেন দুর্দান্ত ইনিংস— ৩৮ বলে ৬৪ রান (২ চার, ৭ ছক্কা)।
এটি তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি
নুরুল হাসান ছিলেন অপরাজিত ৯ বলে ১০ রানে।

আফগানিস্তানের হয়ে মুজিব উর রহমান নেন ২ উইকেট।


সিরিজ জয়ের আনন্দ

এই জয়ে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট ও দ্বিতীয় ম্যাচে ২ উইকেটের জয় পেয়েছিল টাইগাররা।

পুরো সিরিজে বাংলাদেশের বোলারদের ধারালো বোলিং ও ব্যাটারদের স্থিতিশীল ইনিংস দলকে দারুণ আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে।

অধিনায়ক জাকের আলি ম্যাচ শেষে বলেন,

“এই সিরিজ আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে। সবাই একসঙ্গে পারফর্ম করেছে। ছেলেরা দারুণ খেলেছে—এটাই দলের শক্তি।”


পরবর্তী সিরিজ

এখন টাইগারদের সামনে আরও বড় পরীক্ষা।
আগামী ৮ অক্টোবর থেকে আবু ধাবিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের।
প্রথম ম্যাচেই দেখা যাবে দুই দলের নতুন পরিকল্পনা ও লড়াইয়ের রূপ।


সাত বছর আগে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ।
আজ সেই ইতিহাস উল্টে দিয়ে জাকের আলিদের দল দেখাল—টাইগাররা ফিরেছে আরও শক্ত হয়ে।
শারজাহর মাঠে গর্জন তুলেছে লাল-সবুজের পতাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *