গাজায় জিম্মিদের মুক্তির জন্য ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে: মার্কো রুবিও

মাইক্রোফোন সামনে দাঁড়ানো মার্কো রুবিও টকশোতে বক্তব্য দিচ্ছেন; পটভূমিতে সংবাদ চিত্র ও বিশ্ব মানচিত্রের ঝলক। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন—গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ না হলে জিম্মিদের মুক্তি হতে পারবে না। আলোচনা চলছে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বার্তালাপে। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ঢাকা, ৫ অক্টোবর, ২০২৫ — যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও রোববার বলেছেন, গাজায় বন্দি থাকা জিম্মিদের মুক্তির জন্য ইসরায়েলকে অবিলম্বে বোমাবর্ষণ ও তুমুল হামলা বন্ধ করতে হবে। তিনি টিভি টকশোতে বলেন, যখন আকাশ ও মাটি থেকে হামলা চলছে, তখন কোনো দরজা খোলা থাকে না—তাই যুদ্ধ স্থগিত করা জরুরি।

রুবিও বলেন, “আমার মনে হয় ইসরাইলিরা স্বীকার করবে—যুদ্ধ চলাকালে জিম্মিরা মুক্তি পাবে না। সমঝোতার সময় যুদ্ধ চলতে পারে না।” তিনি যুক্তি দেন, শান্তি প্রক্রিয়া হতে হলে দুই পক্ষের মধ্যে আস্থা ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ থাকা দরকার; তা না থাকলে জিম্মিদের মুক্তি কঠিন হয়ে পড়ে।

এদিকে, ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিদের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার প্রথম দিকের উদ্যোগ হচ্ছে মিশরের পর্যটন শহর শারম এল-শেখে আলোচনায় বসা। নেতানিয়াহু আশা প্রকাশ করেছেন, আলোচনার ফলাফলশ্রুত হতে পারে—কিছু দিনের মধ্যে গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব। সূত্র জানিয়েছে, হামাসও নির্দিষ্ট শর্তে বিনিময়ে বন্দি মুক্তির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, যা কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে দিয়েছে।

রুবিও আরও বলেন, জিম্মিদের দ্রুত মুক্তি নিশ্চিত করতে কেবল রাজনৈতিক সংকল্প নয়, বাস্তবিক **‘লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ’**ও মোকাবেলা করতে হবে—যেমন কিভাবে বন্দিদের নিরাপদে সরে নেওয়া হবে, তাদের স্বাস্থ্য-পরীক্ষা কিভাবে করা হবে, এবং বিনিময়ের সময় নিরাপত্তা কিভাবে বজায় রাখা হবে ইত্যাদি। তিনি সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা দ্রুত পুনর্গঠন করা বা কার্যকর শাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ নয়—এর জন্য সময় ও পরিকল্পনা দরকার।

তাঁর বক্তব্যে আরও শোনা গেছে, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে—বিশেষত যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলো পুনর্বাসন করা হবে, স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলোকে কিভাবে সুসংহত করা হবে এবং নতুন নিরাপত্তা কাঠামো কেমন হবে—এসব সিদ্ধান্তগুলো সহজ হবে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্টও একই রকম আশাবাদ ও সতর্কতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, হামাস যদি ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে ত্বরিত ও শক্ত প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য। তবে ট্রাম্পও বলেছেন—জিম্মিদের মুক্তি ও আরামদায়ক সমাধান চাওয়া হচ্ছে এবং তিনি শীঘ্রই হামাসের ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করছেন।

কেন রুবিওর এই বার্তা গুরুত্বপূর্ণ?

রুবিও কেবল ব্যক্তিগত মতই বলেননি—একজন উচ্চপদস্থ কূটনীতিক হিসেবে তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব পড়তে পারে। তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, যুদ্ধ ও সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকলে কেবল সামরিক লক্ষ্য সফল হলেও কূটনৈতিক লক্ষ্য—বিশেষত বন্দিদের নিরাপদ উদ্ধার—সফল হবে না।

গাজার অবস্থা মানবিক দিক থেকে অত্যন্ত সংকটজনক। বেসামরিক লোকজনের জীবন-জীবিকা স্থবির, হাসপাতালগুলো ভীড়যোগ এবং মৌলিক ন্যায্য সেবা ব্যাহত। এই প্রেক্ষাপটে বন্দিদের মুক্তি আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে একটি নেগোসিয়েশনাল অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে — এবং এটি কেবল কূটনৈতিক ম্যান্ডেট নয়, মানবিক দায়বদ্ধতা হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কীভাবে কাজ করছে?

মিশরে বিশেষ করে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভূমিকা নেয়ার প্রস্তাবিত ভূমিকা—ইজিপ্ট সেন্সর হিসেবে চলে এসেছে বহুবার। শারম এল-শেখে আলোচনায় কিভাবে বিনিময় হবে তা নির্ধারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে; বন্দিদেওয়াদের তালিকা, বিনিময়ের ধাপ, ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়ে তৎপরতা বাড়ানো হবে।

কিছু প্রতিবেদন বলছে—ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কিছু রূপরেখা অনুসারে গাজার জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তির কথা আনা হচ্ছে। এই মেকানিজম সফল হলে সেটি প্রথম ধাপ হিসেবে দেখা হবে—যা পরবর্তী বৃহত্তর শান্তিচুক্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে। তবে তার হার্ডল আছে—বিশেষত কিভাবে হামাসের আনুগত্য নিশ্চিত করা হবে ও গাজায় স্থায়ী শান্তি স্থাপন করা যাবে তা এখনো অনিশ্চিত।

শেষ কথা

মার্কো রুবিওর সরল কিন্তু শক্তিশালী আহ্বান—যে বোমাবর্ষণ বন্ধ না হলে জিম্মিদের মুক্তি সম্ভব নয়—এটি কেবল কূটনৈতিক তর্ক নয়, বরং বাস্তবসম্মত পর্যবেক্ষণ। আন্তর্জাতিক সমাজ যদি মানবিক একটি সমাধান প্রাধান্য দেয়, তা হলে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ও নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করে বন্দিদের নিরাপদ মুক্তি সম্ভব হতে পারে।

তবে প্রকট চ্যালেঞ্জ হলো—কিভাবে একসাথে রাজনৈতিক সংকল্প, কূটনৈতিক দক্ষতা এবং মাঠপর্যায়ের বাস্তব নিরাপত্তা পরিকল্পনা মিলিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। এ দলের ওপর এখন দৃষ্টি থাকবে—কারণ নিঃসন্দেহে মানবতার কাছে এটি একটি বড় পরীক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *