অনলাইন ডেস্ক:
ইসরাইলের দীর্ঘ ১৮ বছরের অবরোধ ভেঙে গাজার উদ্দেশে আবারও রওনা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নৌবহর। ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (FFC)–এর নেতৃত্বে নতুন করে ১১টি জাহাজ গাজা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে। এই বহরে রয়েছেন প্রায় ১০০ জন মানবাধিকারকর্মী ও যাত্রী। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে এফএফসি।
ফ্লোটিলার যাত্রা শুরু
ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ইতালির অটরান্টো বন্দর থেকে ইতালীয় ও ফরাসি পতাকাবাহী জাহাজ যাত্রা শুরু করে। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর যোগ দেয় ‘কনসায়েন্স’ নামের একটি বড় জাহাজ। এর সঙ্গে শিগগিরই যুক্ত হবে ‘থাউজন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা’ নামে আরও আটটি নৌযান। ফলে মোট ১১টি জাহাজ একত্রে গাজা উপত্যকার উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছে।
শহিদুল আলমের অংশগ্রহণ
বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। তিনি রয়েছেন বহরের সবচেয়ে বড় জাহাজ ‘কনসায়েন্স’–এ। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, তাদের সঙ্গে আরও আটটি ছোট নৌকা আছে। ইতোমধ্যে তারা ফিলিস্তিনি টাইম জোনে প্রবেশ করেছেন।
ইসরাইলি বাধা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা
এর আগে গত মাসের শুরুর দিকে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে ৪৪টি জাহাজের আরেকটি বহর গাজা উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। কিন্তু ইসরাইলি নৌবাহিনী সেই বহরের সব জাহাজ থামিয়ে দেয় এবং ৫০০ জনেরও বেশি কর্মীকে গ্রেফতার করে। এর আগেও একাধিকবার গাজার উদ্দেশে যাওয়া জাহাজে ইসরাইলি হামলা চালানো হয়েছে। অনেক সময় যাত্রীদের বহিষ্কার করা হয়েছে এবং মানবিক সহায়তার পণ্য জব্দ করা হয়েছে।
গাজার মানবিক সংকট
গাজা উপত্যকা প্রায় দুই দশক ধরে অবরুদ্ধ। এর ফলে ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে গত দুই বছর ধরে চলমান সামরিক আগ্রাসন পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। ভূমধ্যসাগরের ছোট্ট এই ভূখণ্ড এখন বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। এর ফলে তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে এবং দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ফ্লোটিলার গুরুত্ব
২০০৮ সাল থেকে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন নিয়মিত মানবিক সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো—গাজায় অবরুদ্ধ মানুষের দুর্দশা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা এবং অবরোধ ভাঙার দাবি জোরদার করা। প্রতিবারই নানা বাধার সম্মুখীন হলেও তাদের মিশন আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইতোমধ্যেই এই যাত্রাকে সমর্থন জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই অভিযানকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি গাজার জন্য এক প্রতীকী সংগ্রাম। আবার অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, ইসরাইলি বাহিনী আবারও জাহাজগুলোকে থামিয়ে দিতে পারে।
গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো সহজ নয়। প্রতিটি ফ্লোটিলাই হয়ে উঠছে প্রতিরোধ ও সহানুভূতির প্রতীক। আন্তর্জাতিক এই অভিযানে শহিদুল আলমের অংশগ্রহণ বাংলাদেশকেও একাত্ম করেছে মানবতার এই সংগ্রামে। এখন দেখার বিষয়, অবরোধ ভেদ করে ফ্লোটিলা কতদূর এগোতে পারে।
