প্রধান উপদেষ্টার সাত দফা প্রস্তাব: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা সম্মেলনে সাত দফা প্রস্তাব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস নিউইয়র্কে জাতিসংঘের রোহিঙ্গা সম্মেলনে বক্তব্য রাখলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, ছবি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

অনলাইন ডেস্ক:

রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান কেবল প্রত্যাবাসনের মাধ্যমেই সম্ভব বলে দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।


রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপট

২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হলে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আট বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় সংকট দেখা দিয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন:

  • “রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, সমাধানও সেখানেই।”
  • “বাংলাদেশ সামাজিক, পরিবেশগত ও অর্থনৈতিকভাবে চরম চাপের মধ্যে আছে।”
  • “রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান বাংলাদেশে দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ এটি আমাদের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করবে।”

সাত দফা প্রস্তাবের মূল দিক

অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন—

  1. রাখাইনে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন।
  2. মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর চাপ সৃষ্টি করে সহিংসতা বন্ধ করা এবং সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু।
  3. রাখাইনে শান্তি স্থাপনে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংগ্রহ এবং পর্যবেক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি নিশ্চিত।
  4. রোহিঙ্গাদের রাখাইন সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় স্থায়ী অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে আস্থা তৈরির উদ্যোগ।
  5. যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনায় (Joint Response Plan) অর্থদাতাদের পূর্ণ সহায়তা নিশ্চিত।
  6. জবাবদিহি ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার নিশ্চিত।
  7. মাদক অর্থনীতি ধ্বংস এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব আর অপেক্ষা করতে পারে না। রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন:

  • “আন্তর্জাতিক সুরক্ষা অব্যাহত রাখার তুলনায় প্রত্যাবাসনে অনেক কম সম্পদের প্রয়োজন।”
  • “রোহিঙ্গারা সবসময়ই তাদের মাতৃভূমিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।”

বাংলাদেশের ভোগান্তি ও ঝুঁকি

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে চাপে রয়েছে।

  • আশ্রয়শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাদক পাচার ও অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম বেড়ে যাচ্ছে।
  • স্থানীয় জনগণের জীবিকা ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
  • আন্তর্জাতিক তহবিল কমে যাওয়ায় মানবিক সেবায় সংকট বাড়ছে।

ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি

অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন:

  • “আজ আমাদের সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করতে হবে।”
  • “বাংলাদেশ পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”

রোহিঙ্গা সংকট একটি দীর্ঘস্থায়ী বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সাত দফা প্রস্তাব এই সংকট সমাধানের জন্য বাস্তবসম্মত ও মানবিক রূপরেখা প্রদান করেছে। তবে কার্যকর অগ্রগতি নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ়তা, সমন্বয় এবং মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ প্রয়োগের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *