অনলাইন ডেস্ক:
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানী ঢাকার বাতাস আবারও অস্বাস্থ্যকর মাত্রায় পৌঁছেছে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আন্তর্জাতিক বায়ুমান পরিমাপক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার জানায়, ঢাকার একিউআই (Air Quality Index – AQI) স্কোর দাঁড়িয়েছে ১৬৩। এই স্কোর অনুযায়ী ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে পড়ছে।
অস্বাস্থ্যকর বাতাস মানে হচ্ছে, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিশু, বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সরাসরি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
অন্যান্য শহরের সঙ্গে তুলনা
একই সময়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, যার স্কোর ১৮৬। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসা (১৮০), তৃতীয় স্থানে ভারতের রাজধানী দিল্লি (১৬৫) এবং পঞ্চম স্থানে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় (১৫০)।
ঢাকা চতুর্থ হলেও, এর মানে দাঁড়ায় রাজধানীর বাতাস বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষতিকরগুলোর মধ্যে অন্যতম।
একিউআই সূচক কী বলে?
একিউআই (AQI) হলো বাতাসের মান পরিমাপের আন্তর্জাতিক সূচক। এর মান বিভিন্ন মাত্রায় ভাগ করা হয়—
- ০–৫০: ভালো (Good)
- ৫১–১০০: মাঝারি (Moderate)
- ১০১–১৫০: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর (Unhealthy for sensitive groups)
- ১৫১–২০০: অস্বাস্থ্যকর (Unhealthy)
- ২০১–৩০০: খুব অস্বাস্থ্যকর (Very unhealthy)
- ৩০১–৪০০: ঝুঁকিপূর্ণ (Hazardous)
আজকের ঢাকার স্কোর ১৬৩, অর্থাৎ ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায়।
কেন ঢাকার বাতাস দূষিত?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলো হলো—
- যানবাহনের ধোঁয়া: প্রতিদিন অসংখ্য বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল থেকে নির্গত ধোঁয়া।
- ইটভাটা ও শিল্পকারখানা: শহরের আশপাশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ইটভাটা।
- নির্মাণকাজ: প্রায় সারা বছরই চলতে থাকা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও ভবন নির্মাণ।
- আবর্জনা ও খোলা ধুলাবালি: রাস্তায় ময়লা পোড়ানো এবং খোলা ধুলা বাতাসে মিশে যায়।
ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর হওয়ায় দূষণের প্রভাব এখানে আরও বেশি।
স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
অস্বাস্থ্যকর বায়ুমান সরাসরি মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস ও শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকরা বলছেন—
- শিশু ও বয়স্করা সহজেই হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হন।
- হৃদরোগী ও ডায়াবেটিস রোগীরা বাড়তি ঝুঁকিতে পড়েন।
- দীর্ঘদিন অস্বাস্থ্যকর বাতাসে থাকার ফলে ফুসফুসের রোগ, এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতিকার কী হতে পারে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন—
- গণপরিবহনে ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
- ইটভাটা ও শিল্পকারখানায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার জরুরি।
- নির্মাণকাজের সময় ধুলো নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো বাধ্যতামূলক করা উচিত।
- শহরে আরও বেশি সবুজ এলাকা তৈরি করতে হবে।
এছাড়া সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করা, অযথা আবর্জনা পোড়ানো থেকে বিরত থাকা জরুরি।
বিশ্বে বায়ুদূষণের প্রবণতা
শুধু ঢাকা নয়, বিশ্বের অনেক মেগাসিটি একই সমস্যার মুখোমুখি। দক্ষিণ এশিয়ার শহরগুলো যেমন— লাহোর, দিল্লি, ঢাকায় দূষণের মাত্রা বছরের অনেক সময়ই বিপজ্জনক থাকে। আবার আফ্রিকার শহরগুলোতেও সাম্প্রতিক সময়ে দূষণ বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নীরব হত্যাকারী। প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছে।
ঢাকার সামনে চ্যালেঞ্জ
রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। প্রতিদিন লাখো গাড়ি, হাজারো নির্মাণকাজ, শিল্পকারখানা— সব মিলে বাতাসকে দূষিত করছে।
সরকার বায়ুদূষণ কমানোর জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিলেও বাস্তবে কার্যকারিতা এখনও সীমিত। ফলে ঢাকার বাতাসে শ্বাস নেওয়াই ধীরে ধীরে মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
উপসংহার
রোববার সকালে ঢাকার বাতাসের মান ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে পৌঁছানো আবারও দেখিয়ে দিল— বায়ুদূষণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি বড় হুমকি। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
