অনলাইন ডেস্ক:
পাকিস্তান ও সৌদি আরব বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেকোনো একটি দেশের ওপর আক্রমণ হলে তা অপর দেশটির ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ রিয়াদ সফরের সময় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এর সঙ্গে এ চুক্তি করেন।
সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) তথ্য অনুযায়ী, এই চুক্তির লক্ষ্য হলো উভয় দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো এবং আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করা।
ভারতের অবস্থান
চুক্তি স্বাক্ষরের পরদিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানায়। মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন—
- “আমরা সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তির খবর দেখেছি। বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।”
- “ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর চুক্তির প্রভাব খতিয়ে দেখা হবে।”
- “জাতীয় স্বার্থ ও সামগ্রিক নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
ভারত সরাসরি কোনো বিরূপ মন্তব্য না করলেও স্পষ্ট করেছে যে তারা চুক্তির সম্ভাব্য প্রভাব নজরদারিতে রাখবে।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট
চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো এমন সময়ে, যখন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলা এবং পাকিস্তানে ভারতের “অপারেশন সিঁদুর” হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে। ফলে সৌদি আরব-পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করল।
সৌদি আরবের ব্যাখ্যা
রয়টার্সের প্রতিবেদনে সৌদি আরবের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান—
- এই চুক্তি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়।
- বরং এটি বহু বছরের আলোচনার পর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
অর্থাৎ সৌদি আরব এ চুক্তিকে কৌশলগত সম্পর্কের গভীরতা বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, কোনো তাত্ক্ষণিক সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নয়।
বিশ্লেষণ
- পাকিস্তানের জন্য এটি একটি কূটনৈতিক সাফল্য, কারণ মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি সৌদি আরবকে আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে পেল।
- ভারতের জন্য এটি এক ধরনের নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে যদি পাকিস্তান সৌদি আরবের রাজনৈতিক সমর্থন কাজে লাগাতে চায়।
- আঞ্চলিক নিরাপত্তায় এর প্রভাব নির্ভর করবে চুক্তি বাস্তবায়নের ধাপ ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতার মাত্রার ওপর।
ভারত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে—তারা কোনো প্রতিক্রিয়াশীল মন্তব্য করেনি, তবে জাতীয় স্বার্থে বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানিয়েছে। সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এ প্রতিরক্ষা চুক্তি দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে।
