অনলাইন ডেস্ক:
প্রস্তাবিত বিনিয়োগ
বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৫টি কারখানা পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জাপানের প্রতিষ্ঠান রিভাইভাল প্রজেক্ট লিমিটেড এবং যুক্তরাষ্ট্রের ই-কমার্স কোম্পানি ইকোমিলি যৌথভাবে প্রায় ২৪৫ কোটি টাকা (দুই কোটি মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিগত সম্মতি পাওয়া গেছে। এখন অপেক্ষা কেবল ত্রিপক্ষীয় চুক্তির, যেখানে থাকবে রিভাইভাল, জনতা ব্যাংক ও বেক্সিমকো।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই বিনিয়োগ
বেক্সিমকো গ্রুপ বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক। তাদের বড় ক্রেতার তালিকায় রয়েছে জারা, মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, টার্গেট, আমেরিকান ইগল, পুল অ্যান্ড বিয়ার, বেস্ট সেলারসহ নামকরা ব্র্যান্ড। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত বছর আগস্টে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থানও হুমকির মুখে পড়ে। বিদেশি বিনিয়োগের এ উদ্যোগ শুধু কারখানা চালু করবে না, বরং দেশের অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে।
সরকার ও ব্যাংকের ভূমিকা
বেক্সিমকো জনতা ব্যাংকের কাছে একটি বড় ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান। ফলে বিনিয়োগের আগে ঋণ পুনঃতফসিল করা জরুরি। এজন্যই রিভাইভাল, জনতা ব্যাংক এবং বেক্সিমকোর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে সরকার ইতোমধ্যে ৫৮৫ কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণ দিয়েছে। তবে এ টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। এদিকে, জনতা ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে কারখানা পুনরায় চালুর পক্ষে। বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
রিভাইভালের পরিকল্পনা
রিভাইভালের প্রস্তাব অনুযায়ী—
- কারখানাগুলো চালু হবে ত্রিপক্ষীয় ইজারা চুক্তির মাধ্যমে।
- ঋণ পুনঃতফসিলের শর্তে উৎপাদন শুরু হলে আয় থেকে একটি অংশ যাবে ঋণ পরিশোধে এবং একটি অংশ রিভাইভালের সার্ভিস চার্জ হিসেবে।
- বিদেশি ব্যাংক থেকে দুই কোটি মার্কিন ডলারের ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খোলার ব্যবস্থা করবে রিভাইভাল।
- স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।
- দক্ষ কর্মী নিয়োগ, বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করা হবে।
রিভাইভালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফয়সাল হুদা বলেছেন, “আমরা চাই না এটি আরেকটি হল-মার্ক কেলেঙ্কারি হোক। আমাদের লক্ষ্য বেক্সিমকোর কারখানা চালু করে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।”
ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও বুয়েট নেটওয়ার্ক
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের সংগঠন বুয়েট ইনভেস্টমেন্ট নেটওয়ার্কও এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তাদের সহায়তায় পরবর্তী সময়ে আরও ১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ তোলা হতে পারে। এতে বেক্সিমকোর কারখানাগুলো দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।
সরকারের মনোভাব
সরকার মনে করছে, এ বিনিয়োগের ফলে কেবল শ্রমিকদের কর্মসংস্থানই নয়, দেশের অর্থনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে। বেক্সিমকোর কারখানাগুলোয় ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতি ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় নষ্ট হওয়ার পথে। সেগুলো সচল রাখা অর্থনীতির স্বার্থেই জরুরি।
শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান (অব.) বলেছেন, “কারখানা চালু হলে অনেকের কর্মসংস্থান হবে, আবার সরকারের দেওয়া ঋণও ফেরত পাওয়া সহজ হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতামত
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক বলেছেন, উদ্যোগটি ইতিবাচক। সরকারের পাশাপাশি সব পক্ষের সহযোগিতা করা উচিত। কারণ, এতে ব্যাংকের টাকাও ফেরত পাওয়া যাবে, একই সঙ্গে শ্রমবাজারে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
বেক্সিমকোর ১৫টি কারখানা পুনরায় চালু হলে কেবল শিল্পপ্রতিষ্ঠান নয়, দেশের অর্থনীতি, ব্যাংক খাত, শ্রমবাজার—সবখানেই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ, সরকারি সহযোগিতা এবং ব্যাংক-প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে আবারও গতি ফিরবে।
