নেইমার-ভিনিসিয়ুসদের ছাড়াই চিলির বিপক্ষে ব্রাজিলের দাপুটে জয়

মারাকানায় চিলির বিপক্ষে নেইমার ও ভিনিসিয়ুস ছাড়া ব্রাজিলের দাপুটে খেলা, এস্তেভাওয়ের বাইসাইকেল গোল উদযাপন। চোট ও কৌশলগত কারণে একাধিক তারকা খেলোয়াড়কে ছাড়াই মাঠে নামে ব্রাজিল। তবুও মারাকানায় চিলিকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আনচেলত্তির দল। ছবি: রয়টার্স

অনলাইন খেলাডেস্ক:

ব্রাজিল ৩- চিলি ০

ব্রাজিল মানেই ফুটবলে এক অন্যরকম আবেগ। নেইমার, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রিগোর মতো তারকা খেলোয়াড় ছাড়া যখন মারাকানায় মাঠে নামে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন ব্রাজিলকে হয়তো সমস্যায় পড়তে হবে। কিন্তু বাস্তবে হলো উল্টো। চিলির বিপক্ষে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করে খেলে দারুণ এক জয় তুলে নিল কার্লো আনচেলত্তির দল।

বিতর্কের মধ্যেও জয়ের ধারায় ব্রাজিল

গত কয়েক দিন ধরে ব্রাজিল দলে চলছিল তুমুল বিতর্ক। কোচ আনচেলত্তি দাবি করেছিলেন, নেইমার চোটের কারণে বাইরে। কিন্তু নেইমার নিজেই বলেছেন, তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে কৌশলগত কারণে। এই দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়তে পারত দলের পারফরম্যান্সে। তবে মাঠে নামার পর ফুটবলাররা সেই বিতর্ক ভুলিয়ে দিলেন।

পরিসংখ্যানই বলছে ব্রাজিলের আধিপত্য

মারাকানার ম্যাচে ব্রাজিল পুরো ৬৫ শতাংশ সময় বলের দখল রেখেছে। শট নিয়েছে ২২টি, যার মধ্যে ৮টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে চিলি বল দখল রাখতে পেরেছে মাত্র ৩৫ শতাংশ এবং তাদের নেওয়া ৩টি শটের কোনোটিই ছিল না লক্ষ্যে। পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে দিয়েছে, ম্যাচটি ছিল একেবারেই একপেশে।

প্রথমার্ধে এস্তেভাওয়ের জাদু

ম্যাচের শুরুতে চিলির ডিফেন্সিভ ফুটবলে কিছুটা বেগ পেতে হয় ব্রাজিলকে। একের পর এক আক্রমণ করেও গোল পাচ্ছিল না স্বাগতিকরা। অবশেষে ৩৮ মিনিটে এল সেই জাদুর মুহূর্ত। তরুণ এস্তেভাও এক অসাধারণ বাইসাইকেল কিক থেকে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন। জাতীয় দলের জার্সিতে এটিই তার প্রথম গোল। এই গোলেই বিরতিতে যায় ১-০ গোলে এগিয়ে থাকা ব্রাজিল।

দ্বিতীয়ার্ধে পাকেতা ও গিমারেসের গোল

দ্বিতীয়ার্ধে আনচেলত্তির কৌশলগত পরিবর্তন বদলে দেয় ম্যাচের চিত্র। মাঠে নামেন লুইস হেনরিক। তার গতি ও ড্রিবলিং চিলির রক্ষণভাগকে নাস্তানাবুদ করে তোলে। ৭২ মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে দারুণ ড্রিবল করে পাকেতাকে সহায়তা দেন হেনরিক। তার ক্রসে হেড করে গোল করেন পাকেতা।

শেষদিকে আবারও হেনরিকের জাদু। ডান দিক থেকে আক্রমণ গড়ে তোলেন এবং ব্রুনো গিমারেসের সঙ্গে দুর্দান্ত সমন্বয় করেন। তার শট পোস্টে লেগে ফিরলে সেই বল জালে ঠেলে দেন গিমারেস। এই গোলেই নিশ্চিত হয়ে যায় ব্রাজিলের ৩-০ গোলের জয়।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অবস্থান

এই জয়ের ফলে ১৭ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইয়ে দুই নম্বরে আছে ব্রাজিল। আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা আনচেলত্তির দল তাই এই জয় দিয়ে আরও একবার শক্ত অবস্থান জানান দিল। অন্যদিকে ১৭ ম্যাচে মাত্র ১০ পয়েন্ট পাওয়া চিলি আছে সবার নিচে।

নেইমার বিতর্ক: মাঠে কোনো প্রভাব নেই

নেইমারকে দলে না নেওয়া নিয়ে যেভাবে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার ছায়া মাঠে দেখা যায়নি। বরং তরুণদের পারফরম্যান্সই ইঙ্গিত দিচ্ছে—ব্রাজিলের ভবিষ্যৎও নিরাপদ হাতে। এস্তেভাওয়ের গোল এবং হেনরিকের ভূমিকা ব্রাজিল সমর্থকদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।

সমর্থকদের জন্য বার্তা

মারাকানার দর্শকরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছেন। দল জিতেছে ৩-০ গোলে, আর ভক্তরা পেয়েছেন আস্থা—তারকা অনুপস্থিত থাকলেও ব্রাজিল থেমে যায় না।

নেইমার-ভিনিসিয়ুস-রদ্রিগোদের ছাড়া হলেও ব্রাজিল প্রমাণ করল, তাদের দাপট কমেনি। আনচেলত্তির তরুণ দল দেখাল, আগামী প্রজন্মও বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রস্তুত। এস্তেভাও, হেনরিক, পাকেতা আর গিমারেসরা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন—ব্রাজিল ফুটবলের জাদু এখনও অক্ষুণ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *