জাপা কার্যালয়ের সামনে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত নুর

জাপা কার্যালয়ের সামনে পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতর আহত নুরুল হক নুর জাপা কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষে পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত নুরুল হক নুর, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলো শুক্রবার রাতে রাজধানীতে। জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রক্তাক্ত হয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের পর ব্যাপক লাঠিচার্জ চালায় পুলিশ। এসময় নুরসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

শুক্রবার (২৯ আগস্ট) রাত সোয়া ৮টার দিকে দ্বিতীয়বারের মতো গণ অধিকার পরিষদের নেতারা জাপা কার্যালয়ের সামনে সমবেত হন। তখন থেকেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।


প্রথম দফার সংঘর্ষ

এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে জাপা ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়, এবং স্থানীয় পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে তাদের কার্যালয়ের সামনে এসে হামলা চালায়। অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের দাবি, জাপার নেতাকর্মীরাই ইটপাটকেল ছুড়ে তাদের ওপর প্রথম আক্রমণ চালায়।


দ্বিতীয় দফায় উত্তেজনা ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ

সন্ধ্যার ঘটনার পর রাত সোয়া ৮টার দিকে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা ফের জাপা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে জাপার নেতাকর্মীদের সরে যেতে বাধ্য করে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের ১০ মিনিট সময় দিয়ে ঘটনাস্থল ছাড়তে নির্দেশ দেয়।

কিন্তু তারা ঘটনাস্থল না ছাড়ায় ব্যাপক লাঠিচার্জ চালায় পুলিশ। এতে নুরুল হক নুর মারাত্মক আহত হন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।


পুলিশ ও প্রশাসনের অবস্থান

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক বলেন, “সন্ধ্যায় জাপা ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সেনাবাহিনীর টহল টিম এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

পুলিশ দাবি করেছে, জনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাধ্য হয়ে তারা লাঠিচার্জ করেছে।


রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

  • অনেকেই মনে করছেন, এই সংঘর্ষ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাড়তে থাকা উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ।
  • সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার অভাবের কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছে।
  • সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নুরের সমর্থকরা পুলিশের সমালোচনা করেন এবং ঘটনাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ বলে দাবি করেন।

গণ অধিকার পরিষদের দাবি

গণ অধিকার পরিষদের নেতারা বলেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিলেন। কিন্তু জাপার কর্মীরা প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে উসকানি দেন। পুলিশ তখন নিরপেক্ষ না থেকে তাদের ওপর চড়াও হয়।

তাদের অভিযোগ, পুলিশের আচরণ ছিল একপেশে।


জাতীয় পার্টির দাবি

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গণ অধিকার পরিষদ পরিকল্পিতভাবে তাদের কার্যালয়ে হামলা করেছে। এতে তাদেরও কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

তারা বলেন, নির্বাচন ঘিরে অন্য দলগুলো অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে।


বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের সংঘর্ষ আশঙ্কাজনক। নির্বাচন সামনে রেখে দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতার অভাব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে মনে করছেন, এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে সংলাপ এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নয়ন জরুরি।


নুরের অবস্থা

লাঠিচার্জে গুরুতর আহত নুরুল হক নুরকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি শঙ্কামুক্ত হলেও সুস্থ হতে কিছু সময় লাগবে।


উপসংহার

জাপা কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষ এবং নুরুল হক নুরের আহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সহিংসতা যদি আরও বাড়ে, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য তা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *