জাতীয় নির্বাচনে লড়বেন না জামায়াতের শীর্ষ ৫ নেতা

জামায়াতে ইসলামী নেতারা নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতা — তারা থাকবেন নির্বাচনের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানে

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একদিকে তারা ভোটে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, অন্যদিকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনও চালাচ্ছে। তবে এবার দলের শীর্ষ পাঁচ নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন না।

দলীয় সূত্র জানায়, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এটিএম মাসুম, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান এবং কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম—এই পাঁচজন নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

এর মধ্যে আ ন ম শামসুল ইসলাম অসুস্থতার কারণে প্রার্থী হচ্ছেন না। অন্য চারজনকে রাখা হয়েছে নির্বাচন পরিচালনা ও সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে


দলের ব্যাখ্যা ও বক্তব্য

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন,

“একটা পরিবারের সবাই সব কাজ করে না, এটাই সৌন্দর্য। আমরা কেউ প্রার্থী না হলেও, নির্বাচনের কাজেই আছি—ব্যবস্থাপনা ও প্রচারে।”

তিনি আরও জানান, নির্বাচনের সময় মাঠে প্রার্থীরা কাজ করেন, আবার একই সময়ে নির্বাচনের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাও দেখতে হয়। “এই কাজগুলো অনেক বড় দায়িত্ব, তাই কিছু নেতাকে প্রার্থী না করে সেই কাজে রাখা হয়েছে,” বলেন জুবায়ের।


নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও কৌশল

দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এই চারজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল থাকবেন—

  • নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা,
  • প্রার্থী ও ভোটার সমন্বয়,
  • প্রচার উপকরণ ও কর্মী ব্যবস্থাপনা,
  • চলমান আন্দোলন ও জোট গঠন প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে।

এছাড়া, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে দলীয় নতুন আমির নির্বাচনের দায়িত্বও। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে এবং পরের সাংগঠনিক কাজ তাদের তত্ত্বাবধানেই চলবে।

দল মনে করছে, “যারা প্রশাসনিক কাজ সামলাবেন, তারা নির্বাচনে না নামলে পুরো দল আরও সংগঠিতভাবে কাজ করতে পারবে।”


প্রার্থিতা চূড়ান্ত ও মাঠের প্রস্তুতি

দলীয় সূত্র অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২৯৪ আসনে জামায়াতের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল ১২ নেতার মধ্যে সাতজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

মাঠে ইতিমধ্যে প্রচার-প্রচারণার কাজ শুরু হয়েছে। প্রার্থীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—
“যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।”
অর্থাৎ, দলের কেন্দ্র থেকে নতুন সিদ্ধান্ত এলে কারও জায়গায় অন্য কেউ প্রার্থী হতে পারেন।


কেন এই সিদ্ধান্ত নিল জামায়াত?

১️। দলীয় ভারসাম্য রক্ষা

দলটি মনে করছে, সব নেতা প্রার্থী হলে নির্বাচনী পরিচালনা ব্যাহত হতে পারে। তাই কিছু নেতাকে প্রচার ও ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে।

২️। অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব তৈরির সুযোগ

বয়সে সিনিয়র বা অভিজ্ঞ নেতাদের বদলে এবার তরুণ নেতাদের প্রার্থী করা হচ্ছে। এতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে দলের জন্য বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৩️। স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত কারণ

নায়েবে আমির শামসুল ইসলামের অসুস্থতা দলের একাংশকে প্রভাবিত করেছে। তার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের ভার অন্যদের কাঁধে পড়েছে।

৪️। রাজনৈতিক কৌশল ও জনমত ব্যবস্থাপনা

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত মূলত কৌশলগত। এতে দল নিজের সংগঠন শক্ত রাখবে এবং নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবে।


দলের অভ্যন্তরীণ মন্তব্য

দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,

“এটা কোনো বিভাজন নয়, বরং পরিকল্পিত দায়িত্ব বণ্টন। কেউ নির্বাচনী প্রচারে থাকবে, কেউ ব্যবস্থাপনায়, কেউ আন্দোলনে।”

তিনি আরও বলেন, দলটি ‘একসাথে নির্বাচন ও আন্দোলন’—দুই দিকেই সক্রিয় থাকতে চায়।


প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

অন্য দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ বলছে, “জামায়াতের শীর্ষ নেতারা প্রার্থী না হওয়া মানে, তারা হয়তো ফলাফল নিয়ে বেশি আশাবাদী নন।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জামায়াতের এই সিদ্ধান্ত “ভিতর থেকে সংগঠন গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।”


রাজনৈতিক বিশ্লেষণ (সহজ ভাষায়)

এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই “দলের নতুন রোডম্যাপ” বলছেন।
কারণ—

  • অভিজ্ঞ নেতারা সরাসরি মাঠে না থাকলেও পেছন থেকে সমন্বয় করবেন,
  • নতুন প্রার্থীরা মাঠে কাজ করে অভিজ্ঞতা পাবেন,
  • দলীয় সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যাবে কারণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মাঠে ব্যস্ত নয়।

এইভাবে জামায়াত একসাথে সংগঠন, প্রচার ও নির্বাচন—তিন দিকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।


সম্ভাব্য প্রভাব ও ফলাফল

ইতিবাচক দিক

  • দলটি আরও সংগঠিত হবে
  • তরুণদের নেতৃত্বে সুযোগ তৈরি হবে
  • কেন্দ্রীয় কমান্ড শক্তিশালী হবে

নেতিবাচক দিক

  • শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি ভোটারদের হতাশ করতে পারে
  • প্রার্থীরা নেতৃত্বের অভাব অনুভব করতে পারেন
  • প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো এটিকে দুর্বলতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে

শেষ কথা

জামায়াতে ইসলামী এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এক ভিন্ন কৌশলে।
তাদের শীর্ষ পাঁচ নেতা প্রার্থী না হলেও, তারা নির্বাচনের ব্যবস্থাপনা, প্রচার এবং সংগঠনের কাজে মূল ভূমিকা পালন করবেন।

এভাবে দলটি “নির্বাচন ও সংগঠন” — দুই দিকেই সক্রিয় থাকতে চায়।
এটা সফল হবে কিনা, তা জানা যাবে নির্বাচনের দিনেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *