হাঙ্গেরিয়ান সাহিত্যিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই পেলেন ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার

লাসলো ক্রাসনাহোরকাই–এর মুখমণ্ডল, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী লাসলো ক্রাসনাহোরকাই — ২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল জয়ী (ছবি: নোবেল পুরস্কার আউটরিচ) সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর ২০২৫) ঘোষিত হয়েছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।
এই বছরের নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরির বিখ্যাত লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই

বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নাম ঘোষণা করে।
তারা জানিয়েছে, “দূরদর্শী ও গভীর রচনার জন্য” ক্রাসনাহোরকাইকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
তাঁর লেখাগুলোতে ভয়, একাকীত্ব, সমাজ ও মানুষের অন্তর্দ্বন্দ্ব খুব গভীরভাবে ফুটে ওঠে।


কে এই লাসলো ক্রাসনাহোরকাই?

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি হাঙ্গেরির জিউলা শহরে।
তিনি সমসাময়িক ইউরোপীয় সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ।
তাঁর উপন্যাসগুলো ঘন, দার্শনিক ও দীর্ঘ বাক্যে লেখা হয়, যা পাঠকদের গভীর চিন্তায় নিয়ে যায়।

তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত বই হলো Satantango (সাটানতাঙ্গো), যা পরবর্তীতে চলচ্চিত্রে রূপ নেয়।
এছাড়া The Melancholy of Resistance, War & War, এবং Baron Wenckheim’s Homecoming নামের বইগুলো বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
তাঁর কাজকে অনেক সাহিত্য সমালোচক ফ্রাঞ্জ কাফকা এবং থমাস বার্নহার্ড–এর ধারার সঙ্গে তুলনা করেন।


কেন তিনি নোবেল পেলেন

রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি জানিয়েছে,

“ক্রাসনাহোরকাই তাঁর রচনায় মানবজীবনের ভয় ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে শিল্পের আলো জ্বালিয়েছেন। তাঁর লেখনী প্রমাণ করেছে, সাহিত্য এখনও মানুষকে ভাবাতে, নাড়া দিতে এবং সত্য খুঁজতে সাহায্য করতে পারে।”

অ্যাকাডেমি আরও বলেছে, তাঁর কাজ “বিশ্বব্যাপী ভয়াবহতার মধ্যেও সাহিত্যের শক্তি অটুট আছে” — এই বিশ্বাসকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করেছে।


তাঁর লেখার ধরন

লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের গল্পের মূল বিষয় সাধারণ মানুষ, যাদের জীবন নানা সংকট ও বিভ্রান্তিতে ভরা।
তিনি জীবনের অন্ধকার, হতাশা ও ভয়কে এমনভাবে তুলে ধরেন যে পাঠক নিজের মধ্যেই উত্তর খুঁজতে বাধ্য হয়।
তাঁর রচনায় প্রায়ই দীর্ঘ, বিরামহীন বাক্য দেখা যায় — যেন একটানা চিন্তার প্রবাহ।


নোবেল পুরস্কারের মূল্য ও ঘোষণা ক্রম

এই বছরের নোবেল পুরস্কারের আর্থিক মূল্য প্রায় ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ১২ লাখ মার্কিন ডলার)
প্রতি বছরই সাহিত্যের নোবেল দেওয়া হয় এমন একজন লেখককে, যার কাজ মানবতা, কল্পনা ও সত্যকে নতুনভাবে প্রকাশ করেছে।

২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সূচনা হয় ৬ অক্টোবর থেকে —

  • ৬ অক্টোবর: চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল জেতেন মেরি ই. ফ্রাঙ্কো, ফ্রেড রামসডেল ও শিমন সাকাগুচি।
  • ৭ অক্টোবর: পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পান জন ক্লার্ক, মিশেল ডেভোরেট ও জন মার্টিনিস।
  • ৮ অক্টোবর: রসায়নে নোবেল পান সুসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম. ইয়াঘি।
  • ৯ অক্টোবর: সাহিত্যে নোবেল পেলেন লাসলো ক্রাসনাহোরকাই।

আসছে ১০ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে, আর ১৩ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেল দেওয়া হবে।


বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া

পুরস্কার ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাহিত্যপ্রেমীরা আনন্দ প্রকাশ করেন।
অনেকে লিখেছেন, “ক্রাসনাহোরকাই এমন এক লেখক, যিনি অন্ধকারকেও কবিতায় রূপ দিতে পারেন।”
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী এক বার্তায় বলেন, “আমরা আজ জাতীয় গর্ব অনুভব করছি।”

বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে,
এই জয় মধ্য ইউরোপীয় সাহিত্যের এক ঐতিহাসিক স্বীকৃতি —
যেখানে শব্দ, দর্শন ও মানবচেতনা একসাথে জীবন্ত হয়ে ওঠে।


গত বছরের সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী

২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার নারী লেখক হান কাং
তাঁর লেখার “গভীর কাব্যিক গদ্য ও মানবতার প্রতি সহানুভূতি”র জন্য তিনি সম্মানিত হন।
এই বছর লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের জয় সেই ধারাকেই আরও সমৃদ্ধ করেছে।


সাহিত্যের শক্তি আবারও প্রমাণিত

এই পুরস্কার প্রমাণ করে যে, সাহিত্য শুধু বিনোদন নয় —
এটি আমাদের অনুভূতি, ভয় ও চিন্তাকে বোঝার এক শক্তিশালী মাধ্যম।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের জয় আমাদের মনে করিয়ে দেয়,
শিল্প সব সময়ই সময়ের অন্ধকারকে আলোকিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *