তিস্তার আতঙ্ক: বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে পানি, নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ

নিচু অঞ্চলে বাড়িতে ঘিরে পানি, মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে — তিস্তা নদীর ভয়ঙ্কর মাত্রা তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা লঙ্ঘন করায় নিচু এলাকা প্লাবিত — রাতভর বন্যার আতঙ্কে মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছে, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

রবিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বেড়েছে। ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে সন্ধ্যা ৬টার দিকে পানির পরিমাণ ছিল বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপরে। কিন্তু রাত ১২টার দিকে পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে চলে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভারী বৃষ্টি আর উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি হঠাৎ বেড়ে গেছে। রাতের মধ্যে পানি ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় রেড অ্যালার্ট ঘোষণা করা হয়েছে।


পানি বেড়ে যাওয়ায় রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী অনেক গ্রামে পানি ঢুকেছে।

সন্ধ্যা থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক বাড়ি, রাস্তা, খেত—সব পানিতে তলিয়ে যায়।
মানুষ আতঙ্কে ঘুমাতে পারছেন না। অনেকেই গবাদিপশু, চাল-ডাল, কাপড় আর শিশুদের নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন স্কুল, মসজিদ ও উঁচু বাঁধে

চর ইচলির বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন,

“সন্ধ্যা থেকে পানি বাড়তেছিল, তাই রাতে আর বাড়িতে থাকা নিরাপদ মনে হয়নি। বাচ্চা আর গরু-ছাগল নিয়ে বাঁধে চলে এসেছি।”

চর বাঘ ডোহরার আয়নাল হক বলেন,

“এই বছর আজকেই তিস্তায় সবচেয়ে বেশি পানি দেখলাম। সবাই চর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছে। সারারাত আতঙ্কে কাটবে।”


গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদু হাসান মৃধা বলেন,

“নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে। সবাইকে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে—প্রয়োজনে গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে।”

প্রশাসন আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয় খুলে দিয়েছে। মানুষকে সেখানে থাকার জন্য বলা হচ্ছে। এছাড়া নদীর পাড়ে সারারাত নজরদারি চলছে।


ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান,

“সকাল ছয়টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে পানি ৮৫ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়।”

তিনি আরও জানান,

“পানির চাপ সামলাতে ব্যারাজের সব ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। কালীগঞ্জ এলাকার ডান তীরের প্রধান বাঁধে কিছু ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেটি দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে।”


বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় অনেক গ্রামের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁটাপথেও যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।
মানুষ কষ্ট করে শুকনো খাবার সংগ্রহ করছে।
কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে নিরাপত্তার জন্য।

শিশু ও বৃদ্ধদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে। অনেকে নদীর পাড়ে রাতভর ঠান্ডা আর বৃষ্টিতে কষ্টে কাটাচ্ছেন।


পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, উজানে এখনো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি আরও বাড়তে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।
তারা সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।


প্রশাসন বলছে—

  • সবাইকে শান্ত থাকতে হবে, তবে সতর্কও থাকতে হবে।
  • বাড়ির আশপাশে পানি উঠলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে।
  • শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশুদের আগে সরিয়ে নিতে হবে।
  • আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার ও ওষুধের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

ইউএনও ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একযোগে কাজ করছে যাতে বড় বিপর্যয় ঠেকানো যায়।


তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের মানুষ আবারও বন্যার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
রাতভর মানুষ নির্ঘুম থেকে নিজেদের নিরাপদে রাখার চেষ্টা করছেন।

এখন সবার একটাই আশা—
পানি যেন দ্রুত নেমে যায়, মানুষ যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *