আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত
অনলাইন ডেস্ক:
নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা অসদাচরণ করলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের। এ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ সংশোধনের খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শাস্তি বাড়ানোর কারণ
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, সংশোধনী আইনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে। বিশেষ করে যারা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবেন, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।
- বিদ্যমান আইনে নির্বাচনী দায়িত্ব অস্বীকার করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ছিল।
- সংশোধিত আইনে এই অর্থদণ্ড বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে।
- নির্বাচনী দায়িত্বে অসদাচরণ করলে আগে ছয় মাস কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানা ছিল।
- নতুন আইনে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড, সঙ্গে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে নতুন সংযোজন
সংশোধনীতে ধারা ২, ৫ ও ৬-এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।
- নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
- শৃঙ্খলামূলক শাস্তির ধারা হালনাগাদ করা হয়েছে।
- নতুন উপধারা যোগ করা হয়েছে যাতে দায়িত্বে অবহেলা বা কমিশনের আদেশ অমান্য করলে তা সরাসরি অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং চাকরির বিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য হবে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনেও সংশোধন
উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ সংশোধনের প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। ধারা ৩(৪) প্রতিস্থাপন করে নতুনভাবে ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে কমিশনের প্রশাসনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।
অর্থসংক্রান্ত অধ্যাদেশ
একই বৈঠকে ‘অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়াও চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এর আওতায়—
- মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ আদেশে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
- আয়কর আইন ২০২৩ সংশোধন করে সরকারি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগে কর হার ১০% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা হয়েছে।
- পরিবহন খাতে কর সংগ্রহকে চূড়ান্ত করযোগ্য আয় হিসেবে গণ্য করা হবে।
সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি
সভায় চলমান সংস্কার কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়। উপদেষ্টা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী—
- পূর্ববর্তী ব্যাচে গৃহীত ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ২৪টি ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত,
- ১৪টি আংশিক বাস্তবায়িত,
- বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব ছাড়াও অনেক মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আরও সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। এসব সংস্কারের পূর্ণ তালিকা শিগগিরই একটি সংকলন বুকলেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সংশোধন
বাংলাদেশে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা অপরিহার্য। পূর্বে শাস্তির বিধান দুর্বল থাকায় অনেকে দায়িত্বে গাফিলতি করতেন। নতুন সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তি কঠোর হওয়ায় কর্মকর্তাদের মধ্যে জবাবদিহি বাড়বে এবং ভোটারদের আস্থাও দৃঢ় হবে বলে মনে করছে সরকার।
