অনলাইন বিনোদন ডেস্ক:
তথ্যসূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
শুরুর ক্যারিয়ার ও জনপ্রিয়তা
নব্বই দশকে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠেছিলেন অভিনেত্রী মোহিনী। সৌন্দর্য, প্রতিভা এবং অনন্য অভিনয়ের জন্য তিনি অল্প সময়েই দর্শকের মন জয় করেন। শিবাজি গণেশন, চিরঞ্জীবী, মোহনলাল, মামুত্তি, বিক্রম, সারথকুমারসহ দক্ষিণ ভারতের প্রায় সব জনপ্রিয় সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। শুধু আঞ্চলিক সিনেমাতেই নয়, বলিউডেও ১৯৯১ সালে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে ‘ড্যান্সার’ ছবিতে অভিনয় করে নজর কাড়েন।
কিন্তু এত সাফল্যের মাঝেও ক্যারিয়ারের এক পর্যায়ে তাঁকে সম্মুখীন হতে হয়েছিল এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির, যা আজও তাঁকে কষ্ট দেয়।
বিতর্কিত গান ও জোরপূর্বক দৃশ্য
মোহিনী অভিনীত আর কে সেলভামণি পরিচালিত ‘কানমানি’ ছিল একটি রোমান্টিক ড্রামা। প্রাশান্তের বিপরীতে অভিনীত এই ছবিটি দর্শকমহলে জনপ্রিয় হলেও সমালোচনার ঝড় তুলেছিল একটি বিশেষ গান—‘উদল তাঝুভা’। সমালোচকদের মতে, গানটির মূল উদ্দেশ্য ছিল অভিনেত্রীকে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা।
সম্প্রতি আভল বিকাটান-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোহিনী জানান, সেলভামণি একটি সাঁতারের পোশাকের দৃশ্য ধারণ করতে চাইলে তিনি তীব্র অস্বস্তিতে ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন—
“আমি তখন সাঁতারই জানতাম না। আধা পোশাকে পুরুষ প্রশিক্ষকের সামনে শিখব কিভাবে? তখন নারী প্রশিক্ষক পাওয়া যেত না। আমি কল্পনাও করতে পারিনি এমন দৃশ্যে অভিনয়ের।”
এই অবস্থায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং দৃশ্যটি করতে অস্বীকার করেন। এর ফলে কয়েক ঘণ্টা শুটিং বন্ধও রাখতে হয়েছিল।
বাধ্য হয়ে কাজ, পরে দৃঢ় প্রত্যাখ্যান
অভিনেত্রীর দাবি, প্রযোজনার কাজ থেমে না যায়, সে কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি দৃশ্যটি করেন। তবে পরে একই ধরনের দৃশ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব এলে দৃঢ়ভাবে না বলেন। মোহিনীর ভাষায়—
“আমি তখন বলেছিলাম, এটা তোমাদের সমস্যা, আমার না। যেমন আগে আমাকে জোর করে করিয়েছিলে, তেমনটা আর হবে না।”
তিনি আরও বলেন, ‘কানমানি’ই তাঁর একমাত্র ছবি, যেখানে তাঁকে নিজের সম্মতি ছাড়াই অতিরিক্ত গ্ল্যামারাইজড রূপে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
চরিত্রের প্রাপ্য স্বীকৃতি না পাওয়া
অভিনেত্রীর আক্ষেপ, ছবিতে তাঁর চরিত্রটি ছিল যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ও সুন্দর, কিন্তু ‘গ্ল্যামারাইজড’ দৃশ্যগুলোর কারণে চরিত্রের গভীরতা আড়ালে পড়ে যায়। দর্শক ও সমালোচকরা ছবির প্রকৃত অভিনয়শৈলীর চেয়ে বিতর্কিত গান নিয়েই বেশি আলোচনা করেন।
দীর্ঘ দুই দশকের ক্যারিয়ার
প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে মোহিনী অভিনয় করেছেন একাধিক হিট সিনেমায়। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—
- চিন্না মরুমাগাল
- আদিত্য ৩৬৯
- হিটলার
- ইনাথে চিন্তা বিষয়ম
- সৈন্যম
- ভেশম
- ওরু মরাভাথুর কানাভু
- থায়াগম
- নিশব্দা
এই ছবিগুলো তাঁকে দক্ষিণ ভারতীয় দর্শকের কাছে আরও জনপ্রিয় করে তোলে।
আজকের প্রেক্ষাপটে
মোহিনীর অভিজ্ঞতা এক গভীর বাস্তবতা প্রকাশ করে—চলচ্চিত্র জগতে নারীরা প্রায়শই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন যেখানে তাঁদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা উপেক্ষিত হয়। আজকের দিনে এই অভিজ্ঞতাগুলো নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।
অভিনেত্রীর এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি আবারও প্রমাণ করে, শিল্পীদের পেশাদার সাফল্যের আড়ালে লুকিয়ে থাকে নানা বেদনা ও ত্যাগ।
