এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে অনিশ্চয়তার পথে বাংলাদেশ

আবুধাবির আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হতাশায় মাঠ ছাড়ছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা প্রথম দুই ওভারেই ধাক্কা খেল বাংলাদেশ, শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হারের বেদনা ছবি এএফপি

অনলাইন খেলা ডেস্ক:

ম্যাচের শুরুতেই ধাক্কা

আবুধাবির আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুটা ছিল ভয়াবহ। প্রথম দুই ওভারেই কোনো রান ছাড়াই হারাতে হয় ২ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে এর আগে মাত্র দু’বার এমন হয়েছে। এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয় টাইগাররা।

নুয়ান তুষারা ও দুষ্মন্ত চামিরার সেই দুর্দান্ত বোলিংয়ের জালে বাংলাদেশ ব্যাটিং অচল হয়ে পড়ে। প্রথম রান তুলতে সময় লাগে ১৪ বল। শুরুতেই চাপটা গ্যালারি থেকে ছড়িয়ে পড়ে ড্রেসিংরুমেও।


লিটনের লড়াই, তবে ব্যর্থতা কাটেনি

অধিনায়ক লিটন দাস চেষ্টা করেছিলেন দলকে টেনে তোলার। ষষ্ঠ ওভারে দাসুন শানাকার বলে কয়েকটি বাউন্ডারি মেরে খানিকটা স্বস্তি ফেরালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।

তার সঙ্গী তাওহিদ হৃদয় রানআউট হয়ে ফিরে যান। পরে মেহেদী হাসানও ব্যর্থ হন। লিটন ২৬ বলে ২৮ রান করে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। ৫৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের অবস্থা তখন দুঃসহ। মনে হচ্ছিল ১০০ রানও অতিক্রম করা কষ্টকর হবে।


জাকিরের ব্যাটে কিছুটা লড়াই, ছবি: এএফপি

জাকের-শামীমের জুটি, কিছুটা আশা

তবে হাল ধরেন জাকের আলী ও শামীম হোসেন। দু’জন মিলে ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে করেন রেকর্ড ৮৬ রান (৬১ বলে)। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছয় বা তার নিচে নেমে এত বড় জুটি আগে হয়নি।

শামীম খেলেন ৪২ রানে অপরাজিত ইনিংস, আর জাকের অপরাজিত থাকেন ৪১ রানে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সংগ্রহ করে ২০ ওভারে ১৩৯/৫। যদিও এই রান প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি।


লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে জয় নিশ্চিত

বাংলাদেশ বোলারদের সামনে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর জন্য প্রয়োজন ছিল অদ্ভুত কিছু। শুরুতে মোস্তাফিজুর রহমান কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে সেই আশা জাগালেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

মেহেদী হাসান শরিফুলের বলে ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় চাপ বাড়ানোর সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। এরপর পাতুম নিশাঙ্কা ও কামিল মিশারা গড়ে তোলেন ৯৫ রানের জুটি। নিশাঙ্কা করেন ৫০ রান (৩৪ বলে), আর জীবন পাওয়া মিশারা অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে।

শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৪.৪ ওভারেই ১৪০ রান তুলে সহজ জয় তুলে নেয়।


পরিসংখ্যান

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৯/৫

  • শামীম ৪২*
  • জাকের ৪১*
  • লিটন ২৮

শ্রীলঙ্কা: ১৪.৪ ওভারে ১৪০/৪

  • নিশাঙ্কা ৫০
  • মিশারা ৪৬*

ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কামিল মিশারা


গ্যালারিতে দর্শকদের কষ্ট

স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছিলেন। শ্রমের টাকা খরচ করে মাঠে এসে হতাশা নিয়েই ফিরতে হলো তাদের। তবে জাকের ও শামীমের লড়াই সামান্য হলেও দর্শকদের আশা জাগিয়েছিল।


বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

এই হারে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পথচলা এখন অনিশ্চিত। সুপার ফোরে ওঠার জন্য শুধু আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলেই হবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে নানা হিসাব-নিকাশের দিকে।


বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের সমস্যা পুরোনোই থেকে গেছে—শুরুর ব্যাটিং ব্যর্থতা, ফিল্ডিংয়ে ভুল, আর বোলিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব। জাকের-শামীমের মতো ব্যাটাররা লড়াই করার চেষ্টা করলেও মূল খেলোয়াড়দের দায়িত্বশীল ইনিংস ছাড়া বড় ম্যাচ জেতা সম্ভব নয়।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই হারে বোঝা গেল, বাংলাদেশ দলকে এখনো অনেক দূর যেতে হবে প্রতিযোগিতামূলক হতে।


প্রথম দুই ওভারে ২ উইকেট হারানোই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত কিছুটা লড়াই করলেও শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন ঝুলে গেছে। টাইগারদের জন্য সামনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাই বাঁচা-মরার লড়াই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *