অনলাইন খেলা ডেস্ক:
আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে ২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ঘরের মাঠে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে লিওনেল মেসি নামলেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে শেষবারের মতো। মেসির জন্য রাতটি শুধু প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের বিদায় ছিল না, বরং দেশের মাটিতে গড়ে ওঠা দুই দশকের স্মৃতির আবেগঘন সমাপ্তি।
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জিতেছে ৩-০ গোলে। দলের জয়ে জোড়া গোল করে মেসি আবারও প্রমাণ করলেন—বয়স বাড়লেও ফুটবলের যাদু এখনও তার পায়ের ভেতরেই আছে।
পরিবারের উপস্থিতি ও দর্শকদের ভালোবাসা
স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন মেসির পরিবার। জাতীয় সংগীতের সময় তার তিন ছেলে এসে দাঁড়িয়েছিল পাশে। গ্যালারিতে উঠে এসেছিল আবেগঘন স্লোগান—
“ওলে, ওলে, ওলে… মেসি, মেসি, মেসি!”

এমন দৃশ্য শুধু একজন কিংবদন্তির প্রাপ্য। মেসি নিজেও ম্যাচ শেষে বললেন, “নিজের দেশে, নিজের মানুষদের সামনে এভাবে শেষ করতে পারা সব সময়ের স্বপ্ন ছিল।”
কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ—প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা
মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কোপা আমেরিকা ২০২১ এবং বিশ্বকাপ ২০২২ জয়। আর্জেন্টাইনদের কাছে তিনি দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন। তাই বিদায়ী ম্যাচে তার প্রতি দর্শকদের আবেগও ছিল অসীম।
২০২৬ বিশ্বকাপ: খেলবেন কি না?
মেসিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন? তিনি উত্তর দিয়েছেন, “দেখা যাক।”

ছবি এএফপি
এমন উত্তর যেন তার ভক্তদের জন্য একই সঙ্গে আশা ও অনিশ্চয়তা রেখে গেল। মেসি বলেছেন, বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার কারণে হয়তো আরেকটি বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে তিনি প্রতিদিনের অনুভূতি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
মেসির বক্তব্য
- “অনেক বছর ধরে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। কিন্তু আমি সব ভালো স্মৃতি নিয়েই থাকব। আজকের ম্যাচ ছিল প্রতিযোগিতামূলকভাবে দেশের মাটিতে শেষ।”
- “আমি দিন ধরে ধরে এগোই। ভালো লাগলে খেলি, ভালো না লাগলে খেলি না। তাই এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।”
- “মৌসুম শেষে প্রাক-মৌসুম পাব। তারপর ছয় মাস সময় থাকবে। আশা করি এমএলএস মৌসুম ভালো কাটবে। তারপরই সিদ্ধান্ত নেব।”
আবেগঘন বিদায়
আর্জেন্টিনার দর্শকরা বুঝতে পারছিলেন—এটাই হয়তো দেশের মাটিতে মেসিকে শেষবারের মতো দেখা। তাই বিদায়ী ম্যাচে গ্যালারির প্রতিটি চিৎকারে ছিল আবেগ, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা।
সামনে কী?
আর্জেন্টিনা আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের বিপক্ষে মাঠে নামবে। সেটি হবে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তাদের শেষ ম্যাচ। তবে মেসি জানিয়েছেন, সেই ম্যাচে তিনি খেলবেন না। অর্থাৎ আর্জেন্টিনার মাটিতে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষের ম্যাচটিই ছিল তার শেষ প্রতিযোগিতামূলক খেলা।
লিওনেল মেসি শুধু আর্জেন্টিনার নয়, বিশ্বের কোটি ভক্তের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। ঘরের মাঠে বিদায়ী ম্যাচে তার চোখেমুখের আবেগ বুঝিয়ে দিয়েছে—এখনও ফুটবল তার ভালোবাসা, তবে শরীর আর সময়ই ঠিক করবে তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন কি না।
মেসির কথাই শেষ সত্য—
“দিন ধরে ধরে এগোবো। দেখা যাক।”
