অনলাইন ডেস্ক:
মূল প্রতিবেদন
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সামনের নির্বাচন ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। তিন মাস আগে দায়িত্ব নেয়া সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল তখন বলেছিলেন, তিনি আসছেন কেবল একটি ‘টি-টোয়েন্টি ইনিংস’ খেলতে। অর্থাৎ, স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে এসেছেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মনোভাব বদলেছে। এখন তিনি জানালেন, টি-টোয়েন্টির বদলে এবার তিনি লম্বা ইনিংস খেলতে চান—যেন ওয়ানডেতে নামার প্রস্তুতি।
দায়িত্ব নেয়ার সময়কার বক্তব্য
বিসিবির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সময় বুলবুল স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তিনি দীর্ঘমেয়াদে বোর্ডে থাকার পরিকল্পনা করেননি। বরং তিনি চেয়েছিলেন স্বল্প সময়ে কিছু পরিবর্তন আনার। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তার পরিকল্পনা অনেক বৃহৎ। বিসিবির নির্বাচন অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেখানে পরিচালক পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সিলেট জেলা স্টেডিয়াম পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই ঘোষণা দেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা ইনশাআল্লাহ নির্বাচন করব। আমরা একটা সঠিক নির্বাচন করব। এখানে সভাপতি ইলেকশন হয় না, ডিরেক্টর ইলেকশন হয়। সেটাই প্রথম লক্ষ্য, সেখানে থাকার চেষ্টা করব। পরবর্তীতে যদি সুযোগ হয়, আমি চেষ্টা করব যেভাবেই হোক বাংলাদেশকে সার্ভ করার।”
হঠাৎ মন পরিবর্তনের কারণ
শুরুতে কেবল অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব নেয়ার কথা বললেও কেন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন—সেই প্রশ্নও উঠেছে। জবাবে বুলবুল বলেন,
“আমি বলেছিলাম কুইক ইনিংস খেলার কথা, কিন্তু সেই কুইক ইনিংস শেষ হয় নাই। তাই টি-টোয়েন্টি থেকে ফিফটি ফিফটিতে যাওয়ার মনস্থির করেছি। তার চেয়ে বড় কথা যেহেতু আমাদের অনেক সম্ভাবনা আছে, তাই নেক্সট স্টেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অর্থাৎ, তিনি বুঝতে পেরেছেন স্বল্প সময়ে বড় কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই দীর্ঘমেয়াদে থেকে ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে চান।
তামিম ইকবালের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ
এবারের নির্বাচনে আরেক সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবালও অংশ নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, তামিম যদি নামেন, তাহলে সভাপতি পদেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইতোমধ্যেই ঢাকার বেশ কিছু ক্লাব তাকে সমর্থন দিচ্ছে বলে খবর রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে বুলবুলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কূটনৈতিক ভঙ্গিতে উত্তর দেন। তিনি বলেন,
“আমার সাথে কথা হয়নি। আমার সবার প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে, সহযোগীতা থাকবে। আমরা সবাই এখানে এসেছি ক্রিকেটের কাজে। ক্রিকেটকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো।”
ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থ
আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দীর্ঘদিনের ক্রিকেটীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার ঐতিহাসিক গুরুত্বও আছে। তাই বোর্ড পরিচালনায় তার ভিন্নধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি অনেকের কাছে ইতিবাচক মনে হতে পারে।
- তিনি সবসময় জোর দিয়েছেন স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার ওপর।
- ক্রিকেটারদের জন্য উন্নত অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলে আসছেন।
- তরুণদের সুযোগ দেয়ার পক্ষপাতী তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বুলবুল বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তিনি আরও সুসংগঠিত করতে চান। শুধু জাতীয় দলের নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি পরিবর্তন আনতে চান। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের মানোন্নয়ন, জেলা পর্যায়ের অবকাঠামো এবং কোচিং সুবিধা বাড়ানো তার অগ্রাধিকার পাবে।
নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা
বিসিবির আসন্ন নির্বাচন তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
- বুলবুল পরিচালক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
- তামিম ইকবাল সভাপতি পদে নামতে পারেন।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনী লড়াই যে উত্তেজনাপূর্ণ হতে চলেছে, তা সহজেই অনুমেয়।
ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা সবসময় চান, বোর্ডে যেন পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা বজায় থাকে। সাবেক ক্রিকেটাররা যখন বোর্ডে আসেন, তখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। কারণ তারা মনে করেন, ক্রিকেটাররাই ক্রিকেটের আসল সমস্যাগুলো ভালোভাবে বোঝেন।
