নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে সব পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রেস সচিবের আশ্বাস

টিআইবির “১০০” দাবি ভিত্তিহীন: প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর সংখ্যা তুলনায় কম ও কাজে কেন্দ্রিত প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সফরে অংশ নেওয়া সদস্যদের সংখ্যা ও কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক দানা দেয়। ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক:

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা দরকার সরকার তার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে।”

প্রেস সচিব আরও বলেন, ড. ইউনূস নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্বীকৃত করার অঙ্গীকার করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সরকার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাচ্ছে।


নির্বাচনের সময়সূচি

বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, “যারা সরকারকে নির্বাচন করতে দিতে চায় না, তারা ষড়যন্ত্র করবে। এর কিছু কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, সামনে আরও দেখা যাবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”

ড. ইউনূসের বক্তব্যে মূলত স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সরকার নির্বাচন আয়োজন নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।


রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক

সাতটি রাজনৈতিক দল এবং একটি সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মঙ্গলবারের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল:

  • এবি পার্টি
  • নাগরিক ঐক্য
  • গণসংহতি আন্দোলন
  • গণ-অধিকার পরিষদ
  • এলডিপি
  • ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
  • জাতীয় গণফ্রন্ট
  • হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ

এর আগে রোববার বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। এসব বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে


সংলাপের গুরুত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি উঠে আসছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থা সংকট ও উত্তেজনার কারণে নির্বাচনকালীন সময়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করায় অনেকেই একে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব সংলাপ রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা পুনর্গঠনে সহায়ক হবে এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে।


নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে পদক্ষেপ

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনী পরিবেশ স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু রাখতে সরকার ইতিমধ্যে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখার প্রতিশ্রুতি
  • নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো
  • ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
  • আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানানো

তিনি আরও বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা চাইছেন নির্বাচনে যেন সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। এজন্য আলোচনা, সমঝোতা ও আস্থার পরিবেশ গড়ে তোলা হচ্ছে।”


ষড়যন্ত্র ও সতর্কতা

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, “যারা নির্বাচন চায় না, তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করতে পারে। আমাদের সেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণকেও সজাগ থাকতে হবে যাতে কোনো ধরনের অপচেষ্টা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে।”

এ বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, তবে সরকার সে বিষয়ে সতর্ক।


জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ডিসেম্বর থেকেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

  • ভোটার তালিকা হালনাগাদ
  • ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা
  • নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ
    এসবই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলছে।

আস্থার সংকট দূর হবে কি?

বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে সবসময়ই আস্থার সংকট একটি বড় সমস্যা। বিরোধী দলগুলো প্রায়ই অভিযোগ তোলে নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ নয়। তবে এবার অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এবং প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সরাসরি আশ্বাসে অনেকেই নতুনভাবে আশাবাদী হচ্ছেন।

অবশ্য সমালোচকরাও আছেন। তাদের মতে, প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়, কার্যকর পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের একমাত্র নিশ্চয়তা।


রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া

বৈঠকে অংশ নেয়া কয়েকটি দলের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তবে তারা আরও জোর দিয়ে বলছেন, নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা ও শক্তি দিতে হবে।

অন্যদিকে কিছু দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বা অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে নির্বাচন ব্যাহত হতে পারে। তারা চেয়েছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা আরও জোরালো হোক।


উপসংহার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আস্থা তৈরি, উত্তেজনা কমানো এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ ধরনের সংলাপ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

প্রেস সচিবের ভাষায়, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা দরকার, সব পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।” তবে সেই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হয়, তা প্রমাণ হবে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *