রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় শুক্রবার রাতে সংঘর্ষে গুরুতর আহত গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে উচ্চ পর্যায়ের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) সকালে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতেই নুরুল হকের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আজ শনিবার বোর্ডের চিকিৎসকরা বসে তার চিকিৎসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন।
নুরুল হক নুরের শারীরিক অবস্থা
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “নুরুল হকের মাথায় আঘাত রয়েছে এবং তার নাকের হাড় ভেঙে গেছে। এর ফলে গতকাল অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তবে বর্তমানে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে এবং তিনি জ্ঞান ফিরে পেয়েছেন। তবুও আগামী ৪৮ ঘণ্টার আগে তাকে সম্পূর্ণভাবে আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।”
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় নুরুল হককে হাসপাতালে আনার পর দ্রুত সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। চিকিৎসকরা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাকে রাখার সিদ্ধান্ত নেন যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সংঘর্ষের পটভূমি
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের সময় আল রাজী টাওয়ারের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় গুরুতর আহত হন নুরুল হক নুরসহ গণ অধিকার পরিষদের আরও কয়েকজন নেতাকর্মী।
ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নুরুল হক নুরের মুখ থেকে বুক পর্যন্ত রক্তে ভেসে গেছে। তার নাক ফেটে যায় এবং রক্ত ঝরতে থাকে। উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে স্ট্রেচারে তুলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান।
দলের প্রতিক্রিয়া
গণ অধিকার পরিষদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ শনিবার সকালে গণমাধ্যমকে জানান, “নুর ভাইয়ের জ্ঞান ফিরেছে এবং তিনি কিছুটা আশঙ্কামুক্ত হলেও চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। সকালে তার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, দলের নেতাকর্মীরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান করছেন এবং সবাই তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া
নুরুল হক নুর বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা একজন আলোচিত নেতা। ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক থেকে শুরু করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি হিসেবে তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। তার ওপর হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
চিকিৎসক মহলের করণীয়
ঢামেক হাসপাতালে গঠিত মেডিকেল বোর্ডে স্নায়ু বিশেষজ্ঞ, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ এবং অর্থোপেডিক সার্জনসহ একাধিক বিভাগীয় চিকিৎসক রয়েছেন। তারা নুরুল হকের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণ করবেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাথায় আঘাতের কারণে তাকে দীর্ঘ সময় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। নাকের হাড় ভেঙে যাওয়ায় শল্যচিকিৎসার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে রক্তক্ষরণ বন্ধ হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ঝুঁকি কিছুটা কমেছে।
৪৮ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ
চিকিৎসকরা মনে করছেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা নুরুল হক নুরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে আশঙ্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। অন্যথায় জটিলতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়েছে। সাধারণ মানুষও তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। অনেকে হাসপাতালে গিয়ে তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক সহিংসতায় আবারও আলোচনায় এলেন নুরুল হক নুর। তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে পুরো দেশজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ঢামেকের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশের মানুষের অপেক্ষা—তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও রাজনীতির ময়দানে ফিরবেন।
