ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি শুরু: ফিলিপিন্সে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সতর্কতা জারি

ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ভূমিকম্পের পর সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ছে—আকাশে কালো মেঘ ও আতঙ্কিত মানুষ ফিলিপিন্সে ৭.৪ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে সুনামির ছোট ঢেউ আঘাত হেনেছে—সতর্কতা জারি রয়েছে পুরো অঞ্চলে, ছবি প্রতীকি

অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপকূলে আবারও ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফিলিপিন্সে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে ছোট আকারের সুনামি শুরু হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প ও সুনামি কেন্দ্রের প্রধান জানান, উত্তর সুলাওয়েসির তালাউড দ্বীপপুঞ্জে ৩.৫ সেমি থেকে ১৭ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সুনামির ঢেউ রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি বলেন,

“আমরা এটাকে ছোট সুনামি বলছি। এটি আপাতত বিপজ্জনক নয়, তবে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।”


সতর্কতা জারি ও সম্ভাব্য ঝুঁকি

ফিলিপিন্সের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পের পরপরই ইন্দোনেশিয়া, পালাউ ও আশপাশের দ্বীপগুলোতে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়।

ইউএসজিএস (USGS) জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে ঘটে। কেন্দ্র ছিল মিন্দানাও দ্বীপের পূর্বদিকে, দাভাও শহর থেকে প্রায় ১২৩ কিলোমিটার দূরে এবং ৫৮ কিলোমিটার গভীরে

ভূমিকম্পের পর মার্কিন সুনামি সতর্কতা কেন্দ্র জানিয়েছে, ফিলিপিন্সের উপকূলে ১ থেকে ৩ মিটার উচ্চতার ঢেউ উঠতে পারে। ইন্দোনেশিয়া ও পালাউতে ৩০ সেমি থেকে ১ মিটার পর্যন্ত ঢেউ দেখা যেতে পারে।


সম্ভাব্য সময় ও প্রভাবকাল

ফিলিপিন্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রথম সুনামির ঢেউ স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ৪৩ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পারে এবং এই প্রভাব ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী হতে পারে

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে,

“আমরা জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে উচ্চভূমিতে যেতে বলছি। এটি ছোট সুনামি হলেও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে যেন বড় ক্ষতি না হয়।”


আঞ্চলিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলে ভূমিকম্প ও সুনামি খুবই সাধারণ ঘটনা, কারণ এটি ‘রিং অব ফায়ার’ (Ring of Fire) অঞ্চলের মধ্যে পড়ে—যেখানে প্রায়ই টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ ঘটে।

ফিলিপিন্সে প্রভাব:

ফিলিপিন্স ইনস্টিটিউট অব ভলকানোলজি অ্যান্ড সিসমোলজি (PHIVOLCS) বলেছে,

“এটি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ উচ্চতার ঢেউ তৈরি করতে পারে।”
তাদের নির্দেশনায় উপকূলবর্তী মানুষদের নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় পরিস্থিতি:

ইন্দোনেশিয়ায় এখন পর্যন্ত বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
সুলাওয়েসি, মালুকু ও নর্থ হালমাহেরা অঞ্চলের উপকূলে জনসাধারণকে সমুদ্র থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


ভূমিকম্পের মাত্রা ও অবস্থান

বিষয়বিবরণ
ভূমিকম্পের স্থানফিলিপিন্সের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল
কেন্দ্রস্থলমিন্দানাও দ্বীপ, দাভাও থেকে ১২৩ কিমি দূরে
গভীরতা৫৮.১ কিমি (৩৬ মাইল)
মাত্রা (USGS)৭.৪
মাত্রা (PHIVOLCS)৭.৬
সুনামি ঢেউয়ের উচ্চতা১৭ সেমি পর্যন্ত (ইন্দোনেশিয়া), ১–৩ মিটার (ফিলিপিন্সের কিছু এলাকা)

ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে

ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্স বহুবার ভয়াবহ সুনামির মুখে পড়েছে।

  • ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর: ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূলে ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পে সুনামিতে প্রাণ হারান ২ লাখেরও বেশি মানুষ।
  • ২০১৮ সালে সুলাওয়েসি সুনামি: ২ মিটার উচ্চতার ঢেউয়ে নিহত হন প্রায় ৪ হাজার মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অঞ্চলটি ভূমিকম্পের দিক থেকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, তাই নিয়মিত সুনামি মহড়া ও সতর্কতা অপরিহার্য।


বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

ভূমিকম্প ও সুনামি বিশেষজ্ঞরা বলছেন—

  • মানুষকে ভয় না পেয়ে সচেতন হতে হবে।
  • সুনামি সতর্কতা জারি হলে অবিলম্বে উচ্চভূমিতে যেতে হবে।
  • সাগরের ঢেউ হঠাৎ নিচু হলে বুঝতে হবে, বড় ঢেউ আসছে।

ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান বলেছেন,

“এ মুহূর্তে আমরা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাইনি। তবে নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সাগর এখনো অস্থির।”


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিভাগ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিসিএনএন উভয়ই জানিয়েছে,
ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি এখন পর্যন্ত ছোট পরিসরে হলেও সতর্কতা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়নি।


সারসংক্ষেপে (Summary)

  • ফিলিপিন্সে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
  • ইন্দোনেশিয়ায় ৩.৫ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার ঢেউয়ের ছোট সুনামি রেকর্ড।
  • ১–৩ মিটার উচ্চতার বড় ঢেউয়ের আশঙ্কা ফিলিপিন্সে।
  • উপকূলীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
  • পরিস্থিতি এখনো নজরদারিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *