গাজাগামী ফ্লোটিলায় ইসরায়েলের চাপ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা

সমুদ্রকে বেষ্টনাকারী যুদ্ধজাহাজ ও উত্তেজনায় জাহাজে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা” জাহাজগুলোকে ঘিরে ইসরায়েলি যুদ্ধজাহাজ, পরিস্থিতি গড়িয়েছে জটিল ও বিপজ্জনক পর্যায়ে। ছবি রয়টার্স

অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যাওয়া গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি নৌবাহিনী ফ্লোটিলার কাছাকাছি চলে এসেছে এবং যেকোনো মুহূর্তে তারা অভিযান চালাতে পারে। এ কারণে বহরের জাহাজগুলোতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।


কী ঘটছে এখন?

আল আরাবিয়া জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক জাহাজগুলো ফ্লোটিলার মাত্র ১০ মাইল দূরে অবস্থান করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে করে পুরো মিশনই এখন গুরুতর ঝুঁকিতে পড়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, আয়োজকেরা অভিযোগ করেছেন যে ইসরায়েলের দুটি যুদ্ধজাহাজ হঠাৎ দ্রুত এসে বহরের দুটি জাহাজ—আলমা ও সিরিয়াসকে ঘিরে ফেলে। এরপর সেগুলোর নেভিগেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। আয়োজক থিয়াগো আভিলা এটিকে সরাসরি “সাইবার হামলা” বলে উল্লেখ করেছেন ।

এপি নিউজ (AP) জানায়, হামলার পর আন্তর্জাতিক ওই নৌবহরের কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।


অংশগ্রহণকারীদের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম, যিনি বহরের বৃহত্তম জাহাজ কনসায়েন্স-এ আছেন, এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন:

“আলমার ওপর আক্রমণ হয়েছে। একটু পর ওখান থেকে সিগনালও বন্ধ হয়ে গেল। এখন আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। আলমার ওপর যা হচ্ছে, সেটা আমাদের ওপরও হতে পারে।”

দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, অনেক জাহাজের অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন তারা ইসরায়েলি নৌবাহিনীর অবরোধ এড়িয়ে গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। তবে প্রতিনিয়ত সামরিক জাহাজগুলো তাদের ঘিরে ফেলছে, যা চাপ বাড়াচ্ছে।


কারা আছেন এই মিশনে?

  • প্রায় ৪৫টি বেসামরিক নৌকা ও জাহাজ নিয়ে গঠিত এই বহরে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক
  • অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ।
  • সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও রয়েছেন এই মিশনে।

আয়োজকদের দাবি, তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে গাজার ক্ষুধার্ত ও অবরুদ্ধ মানুষের কাছে খাদ্য ও ওষুধসহ মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।


ইসরায়েলের অবস্থান

ইসরায়েলের বক্তব্য হলো, ফ্লোটিলা তাদের ঘোষিত নৌঅবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে, যা নিরাপত্তার জন্য “হুমকি”।
তবে মানবাধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তাই এই অভিযান আটকানো হলে তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হবে।


পরিস্থিতি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • গাজায় দীর্ঘদিনের অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি ও ওষুধের ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে।
  • জাতিসংঘসহ বহু সংস্থা বারবার বলেছে, গাজার জনগণ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে।
  • ফ্লোটিলার সদস্যরা বলছেন, তারা শুধু সরাসরি সহায়তা পৌঁছাতে নয়, বরং বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও এই মিশন চালিয়ে যাচ্ছেন।

গাজা উপকূলের দিকে অগ্রসরমান এই ফ্লোটিলা শুধু মানবিক সহায়তার মিশন নয়—এটি আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক ক্ষমতার এক বড় পরীক্ষা।
বিশ্ব গণমাধ্যমের নজর এখন এই সংকটময় যাত্রার ওপর। একদিকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা উদ্বেগ, অন্যদিকে গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *