অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে—জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্য চলাকালে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তাঁর সফরসঙ্গীরা সভাকক্ষে বসে ছিলেন।
তবে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, এই দাবি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর। সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছবিটি আসলে অন্য এক সময়ের, এবং ভুলভাবে উপস্থাপন করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে।
ছবির আসল প্রেক্ষাপট
সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস জানায়, যে ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। ছবির ক্যাপশনে স্পষ্টভাবে লেখা ছিল:
“প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দেওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ।”
অর্থাৎ, ছবিটি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য শুরু হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তোলা হয়েছিল। সেই সময় নেতানিয়াহু এখনো মঞ্চে ওঠেননি। অথচ একই ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা দাবি প্রচার করা হয়েছে, যেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ওয়াকআউট করেনি।
আসল ঘটনা কী ঘটেছিল?
বাস্তবে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশের শতাধিক প্রতিনিধি গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলও তখন সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং অন্যান্য বিশ্বস্ত গণমাধ্যম কর্তৃক প্রকাশিত ছবিতে স্পষ্ট দেখা যায়—নেতানিয়াহুর বক্তব্য চলাকালে বাংলাদেশের আসন খালি ছিল। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ সমন্বিতভাবে ওয়াকআউট কর্মসূচি পালন করেছিল।
বিভ্রান্তি ও ভুয়া প্রচারণা
ভুয়া ছবির প্রচার মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রমাণিত তথ্য যাচাই না করে ছবি ও সংবাদ শেয়ার করলে জনমনে ভুল ধারণা তৈরি হয়। সুতরাং, নাগরিকদের উচিত যেকোনো তথ্য বা ছবি শেয়ার করার আগে এর উৎস এবং সত্যতা যাচাই করা।
বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান
বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘের মঞ্চেও বাংলাদেশ বারবার গাজায় বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে এবং ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ বক্তব্যে গাজায় নিরীহ মানুষের হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানান এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি তোলেন।
উপসংহার
এটি স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহুর বক্তব্য চলাকালে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিনিধিদল সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। ভাইরাল হওয়া ছবিটি ভিন্ন সময়ে তোলা হয়েছিল এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি অনুরোধ—তথ্য যাচাই ছাড়া কোনো সংবাদ বা ছবি শেয়ার করবেন না।
