অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের আগামী দিনের নেতৃত্ব কারা দেবেন—এই প্রশ্ন সব সময়ই আলোচনায় থাকে। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দেবেন রাজনীতিবিদরাই।
তিনি বলেন, “দেশ পরিচালনার দায়িত্ব রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে। গণতান্ত্রিক সরকারই জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাবে।”
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত “অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ” শীর্ষক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী এবং মার্কিন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মতবিনিময় করেন।
এসময় তিনি তার সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদেরও পরিচয় করিয়ে দেন। এর মধ্যে ছিলেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও হুমায়ূন কবীর, জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও ড. নাকিবুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দুই নেতা আখতার হোসেন ও ড. তাসনিম জারা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
মার্কিন ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের উপস্থিতি
এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ছিলেন ঢাকায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও এক্সিলারেট এনার্জির বাংলাদেশ প্রধান পিটার হাস। এছাড়া দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স করপোরেশনের (DFC) ডেপুটি সিইও নিশা দেশাই বিসওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
তাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতার ইঙ্গিত দেয়।
নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক সরকারের প্রত্যাশা
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আরও জানান, নির্বাচনের পর একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনা করবে। সেই সময়ে মার্কিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এই পরিচয় পর্ব আয়োজন করা হয়েছে।
এটি মূলত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সমন্বয়ের একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের টেকসই উন্নয়ন বিষয়ক প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনেও যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে তিনি বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানান, ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ না করলে বৈশ্বিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ও বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশ ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাই সংকট মোকাবিলায় বিশ্বকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ
প্রধান উপদেষ্টা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ওয়ার্কিং সেশনে যোগ দেন। সেখানে তার সফরসঙ্গী এনসিপি নেতা ডা. তাসনিম জারা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়।
শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রতিটি বৈঠকেই সংস্কার, বিচারব্যবস্থা এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি কেবল বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবেই নয়, বরং একজন বৈশ্বিক নেতা হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছেন।
তার আহ্বান—“বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, সংঘাত বন্ধ করতে হবে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি
ড. ইউনূস বারবার তুলে ধরেছেন, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। তার নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হচ্ছে।
উপসংহার
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বার্তাটি স্পষ্ট—আগামী বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকবেন রাজনীতিবিদরা। বিনিয়োগ, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্যখাত, শান্তি প্রতিষ্ঠা—সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদারের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা এ যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
