অনলাইন ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা থেকে যাত্রা করা একটি সন্দেহজনক মাদকবাহী নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। এতে জাহাজে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান তিনি।
ট্রাম্প দাবি করেন, নৌযানটি অবৈধভাবে মাদক পাচার করছিল এবং এটি আমেরিকার দিকে যাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত ওই অভিযানে মার্কিন সাউদার্ন কমান্ড অংশ নেয়, যা দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার ৩১টি দেশ এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে।
তিনি আরও জানান, “গোয়েন্দা তথ্য নিশ্চিত করেছে যে নৌযানটি পরিচিত পাচার রুট ব্যবহার করে মাদক পরিবহন করছিল। হামলায় তিনজন পুরুষ নিহত হয়েছে। তবে অভিযানে কোনো মার্কিন সেনা হতাহত হয়নি।”
টানা তৃতীয় হামলা
এই মাসেই ভেনেজুয়েলার মাদকবাহী নৌযান লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের এটি তৃতীয় হামলা। এর আগে আরও দুটি নৌযানে বিমান হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ১৪ জনকে হত্যা করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব নৌযান ছিল “নরকো-টেররিস্ট” বা মাদক সন্ত্রাসীদের বাহন।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মাদক পাচারের মাধ্যমে আমেরিকানদের জীবনে বিষ ছড়ানো হচ্ছে। তাই পাচারকারীদের বিরুদ্ধে “কঠোর সামরিক পদক্ষেপ” নেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
ভেনেজুয়েলার পক্ষ থেকে সর্বশেষ এই হামলা নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে এর আগের হামলাগুলোকে দেশটির সরকার যুক্তরাষ্ট্রের “আগ্রাসী পদক্ষেপ” হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, যথাযথ প্রমাণ ও বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই আন্তর্জাতিক জলসীমায় সামরিক হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তারা প্রশ্ন তুলছে—একতরফা হামলার মাধ্যমে আসলেই মাদক পাচার রোধ সম্ভব কি না, নাকি এটি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কৌশল।
বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ভেনেজুয়েলাকে মাদক পাচারের “কেন্দ্র” হিসেবে চিহ্নিত করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসন পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানকে জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অভিযানের ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।
তাদের মতে, মাদক পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আইনি প্রক্রিয়া জরুরি। একতরফা হামলা হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে কিছু নৌযান ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু সমস্যার মূল সমাধান আনতে পারবে না।
আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেনেজুয়েলার নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের বারবার হামলা নিঃসন্দেহে কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন তুলছে। একই সঙ্গে এটি বৈশ্বিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক আইনের চর্চা ও মানবাধিকার সুরক্ষার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। এখন দৃষ্টি ভেনেজুয়েলার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মহলের অবস্থানের দিকে।
