বাগেরহাটে আসন পুনর্বহালের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল

বাগেরহাটে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা, পাশে মিছিল করছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা আসন পুনর্বহালের দাবিতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল—অবরোধে দুর্ভোগ বাগেরহাটবাসীর।

অনলাইন ডেস্ক:

বাগেরহাট জেলাজুড়ে চলছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। সংসদীয় আসনের সংখ্যা চার থেকে তিনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির এই কর্মসূচি সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি আসন ছিল। নির্বাচন কমিশন গত ৩০ জুলাই প্রাথমিকভাবে ঘোষণা দেয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি করা হবে। এরপর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়। নেতাকর্মীরা শুনানিতেও অংশ নেন, তবে সব আপত্তি উপেক্ষা করে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে আসন সংখ্যা তিনেই সীমিত রাখে।


হরতালের চিত্র

সকাল থেকে বাগেরহাটের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে দেখা গেছে অবরোধ।

  • কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড,
  • জেলা প্রশাসকের কার্যালয়,
  • খুলনা-ঢাকা মহাসড়কের দশানী, নওয়াপাড়া, কাটাখালি, মোল্লাহাট সেতু,
  • বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়কের সাইনবোর্ড বাজার,
  • খুলনা-মোংলা মহাসড়কের ফয়লা ও মোংলা বাসস্ট্যান্ড

—এসব জায়গায় গাছের গুঁড়ি, বেঞ্চ, গাড়ি ফেলে অবরোধ করা হয়। ফলে ঢাকামুখী ও খুলনামুখী যাত্রীদের পড়তে হয় দুর্ভোগে।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হরতালকারীরা জেলা নির্বাচন অফিসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ডা. ফকরুল হাসানের গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। তিনি হেঁটে অফিসে প্রবেশ করেন। পৌনে ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল হাসান অফিসে প্রবেশ করতে গেলে তাকেও বাধা দেওয়া হয়। পরে তিনি অন্য অফিসে প্রবেশ করেন।


নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণকারীরা

এই কর্মসূচিতে অংশ নেন—

  • জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম
  • সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাফফর রহমান আলম
  • জামায়াতে ইসলামী বাগেরহাট আমির মাওলানা রেজাউল করিম
  • সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ ইউনুস
  • বিএনপি নেতা মনজুরুল হক রাহাদ ও ফকির তারিকুল ইসলাম

তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেছে।


জনগণের প্রতিক্রিয়া

হরতাল চলাকালীন সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় কর্মজীবী মানুষ গন্তব্যে যেতে পারেননি। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি আন্দোলন-অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। তবে অনেকেই আবার বলেন, “যদি আসন বঞ্চনা হয়, তাহলে আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন তো করতেই হবে।”


রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন পুনর্বিন্যাস একটি জটিল প্রক্রিয়া। জনসংখ্যা, ভৌগোলিক সীমানা ও প্রশাসনিক সুবিধা দেখে কমিশন আসন কমায় বা বাড়ায়। তবে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে তা বিতর্কিত হয়ে দাঁড়ায়। বাগেরহাটের এই আন্দোলন প্রমাণ করছে—স্থানীয় জনগণ চারটি আসন ফেরত পেতে ঐক্যবদ্ধ।


আন্দোলনের দাবি

নেতাকর্মীদের দাবি—
১. চারটি আসন পুনর্বহাল করতে হবে।
২. জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
৩. নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

তাদের মতে, বাগেরহাটে জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক কাঠামো অনুযায়ী চারটি আসনই ন্যায্য।


বাগেরহাটে হরতাল-অবরোধে একদিকে জনগণের দুর্ভোগ, অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতির উত্তাপ বেড়ে চলেছে। নির্বাচন কমিশন যদি সিদ্ধান্তে অনড় থাকে, তবে আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের অংশগ্রহণ ও মতামতকে অবহেলা করলে সেটি দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক অস্থিরতা ডেকে আনবে—এমনই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *