অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা, ৪ সেপ্টেম্বর:
বাংলাদেশে এখনও দুর্নীতি চলছে, তবে জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর এর মাত্রা কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর আন্তর্জাতিক পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমন ও অর্থপাচার প্রতিরোধে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
দুর্নীতি কমেছে, কিন্তু বন্ধ হয়নি
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁ বলেন,
“বাংলাদেশে এখনও দুর্নীতি বিদ্যমান। তবে জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর এর প্রবাহ কিছুটা কমেছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে নানা খাতে সংস্কার কার্যক্রম চলমান।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো প্রয়োজন।
টিআইবির পর্যবেক্ষণ
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যাংকিং খাতসহ নানা জায়গায় সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঋণ ব্যবস্থার মাধ্যমে টাকা পাচার কিছুটা কমেছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন,
“একবার পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফেরত আনা অত্যন্ত কঠিন। তাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত পাচার নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং পাচার প্রতিরোধ।”
তিনি আরও জানান, প্রতিবছর বিদেশি সাহায্য ও বিনিয়োগের পরিমাণের দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটি রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
যুক্তরাজ্যে সম্পদ ফ্রিজ
টিআইবি প্রধান জানান, ইতোমধ্যেই কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি পাচারকারীদের কিছু সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে এটিকে পর্যাপ্ত বলা যাবে না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অর্থপাচার প্রতিরোধে শক্তিশালী আইন ও স্বচ্ছ আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। পাচার বন্ধ করা গেলে কেবল তখনই দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতা পাবে।”
সংস্কার কার্যক্রম চলমান
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়াঁর মতে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কার কার্যক্রম চলমান থাকলেও তার কার্যকারিতা এখনই মূল্যায়ন করা কঠিন। তিনি মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে দুর্নীতি দমন ও অর্থপাচার রোধে স্থায়ী সমাধান আনতে।
বাংলাদেশে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়, তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর এর ধারা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করছেন টিআই নেতৃত্ব। তবুও সমস্যাটি এখনও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই রয়ে গেছে। অর্থপাচার বন্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধিই হতে পারে সঠিক সমাধান।
