সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের পর ফাঁকা হয়ে যাওয়া ক্লাসরুম ও নীরব ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীর সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নীরবতা বিরাজ করছে। ছবি: সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় টানা দ্বিতীয় দিনও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। প্রায় ২৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এই বৃহত্তম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাঙ্গনের স্বাভাবিক কোলাহল এখন অচেনা নীরবতায় ঢেকে গেছে।


সংঘর্ষের পটভূমি

ঘটনার সূত্রপাত শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে। দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী ভাড়া বাসায় ফেরার সময় স্থানীয় এক দারোয়ান তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন জোবরা গ্রামে জড়ো হন। একপর্যায়ে তাঁদের সঙ্গে গ্রামবাসীর বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়, যা দ্রুত ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়।

শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী উভয় পক্ষই ইটপাটকেল, রড, পাইপ, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। রাতভর ও পরদিন দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। এতে অন্তত ২২০ জন আহত হন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ২০০ জনই শিক্ষার্থী।


প্রশাসনের ভূমিকা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে সংঘর্ষ থামেনি। একপর্যায়ে সেনাবাহিনীও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। রবিবার দুপুরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৪৪ ধারা জারি করে।


আহতদের অবস্থা

সংঘর্ষে গুরুতর আহত তিন শিক্ষার্থী এখনো নগরের দুই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁদের একজন বর্তমানে আইসিইউতে আছেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত শিক্ষার্থীদের একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব খরচ বিশ্ববিদ্যালয় বহন করছে।


মামলার অগ্রগতি

আজ সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওছার মোহাম্মদ হোসেন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ আটকও হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।


ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন,

“গতকালের পরিস্থিতি বিবেচনায় আজও ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের বাস স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করছে। আগামীকাল ক্লাস চলবে কি না, সেটি শিগগির জানানো হবে।”

প্রশাসনিক কার্যক্রম, নিয়োগ পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ চললেও শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।


ক্যাম্পাসের বর্তমান চিত্র

সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণত শিক্ষার্থীদের ভিড়ে মুখর ক্যাম্পাস এখন ফাঁকা।

  • সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, শহীদ মিনার, গোল চত্বর ও দুই নম্বর গেট এলাকায় তেমন কোনো শিক্ষার্থী দেখা যায়নি।
  • দু–এক জায়গায় ছিটেফোঁটা শিক্ষার্থী দেখা গেলেও সাধারণ কোলাহল অনুপস্থিত।

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য

লাঞ্ছিত ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন,

“বাসায় আসার পর দারোয়ান দরজা খুলছিলেন না। আমি ডাকলে তিনি অকথ্য ভাষায় গালি দেন। পরে চড় মেরে ধাক্কা দেন এবং লাথি মারেন। আশপাশের মানুষ এগিয়ে এলে তিনি পালিয়ে যান।”

এই ঘটনাই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সংঘর্ষে রূপ নেয়।

আরও জানুন: আহত নুরকে দেখে যা বললেন নাহিদ ইসলাম | Nahid Islam | Nurul Haque Nur | NCP |


মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় অনেকেই অলিগলিতে আটকে পড়েন এবং স্থানীয়দের হাতে মার খেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ধরনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে।


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের এই ঘটনাটি শুধু শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকেই নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আস্থাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এখন প্রয়োজন কার্যকর তদন্ত, দোষীদের শাস্তি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনাই এখন সবার প্রধান দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *