গাজায় ইসরাইলি হামলায় একদিনে নিহত ৭৮ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরাইলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবন ও নিহত ফিলিস্তিনিদের শোকাহত স্বজনরা। দেইর আল বালাহ শরণার্থী শিবিরসহ গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি হামলায় ব্যাপক হতাহত, ছবি: রয়টার্স

অনলাইন ডেস্ক:

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ রক্তপাত ঘটলো। দখলদার ইসরাইলি সেনাদের সামরিক অভিযানে মাত্র একদিনে প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৭৮ ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নারী, শিশু এবং ত্রাণ সহায়তা নিতে যাওয়া সাধারণ মানুষও। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সহিংসতা থামানো সম্ভব নয়।


ইসরাইলি অভিযানের ভয়াবহতা

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইল গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা আরও জোরদার করেছে। একইসাথে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণে জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা।

রোববার দেইর আল বালাহ শরণার্থী শিবিরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভয়াবহ বোমা বর্ষণ চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে নিহত হন ৭৮ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে ৩২ জন কেবল ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারান। অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের অনেকের অবস্থা গুরুতর।


সাংবাদিক নিহত

এই হামলার মধ্যেই প্রাণ হারালেন সাংবাদিক ইসলাম মুহারেব আবেদ। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, এটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ আঘাত এবং যুদ্ধাপরাধের শামিল।


হামাসকে লক্ষ্য করে অভিযান

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসের সশস্ত্র শাখার মুখপাত্র আবু উবাইদাকে লক্ষ্য করে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে। ইসরাইলি সেনারা এবং শিন বেট গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ দাবি করেন, আবু উবাইদা নিহত হয়েছেন। তবে হামাস এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সেনাপ্রধান ইয়াল জামির আরও তীব্র অভিযান চালানোর হুমকি দিয়ে বলেন, হামাসের নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও লক্ষ্যবস্তু বানানো হবে।


মানবিক বিপর্যয়

জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মসংস্থান সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানিয়েছে, গাজা সিটির মানুষদের দক্ষিণে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রের অভাব এবং মৌলিক পরিষেবার সংকট মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে।

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রধান সিন্ডি ম্যাককেইন সতর্ক করে বলেন, ইসরাইলি অভিযান মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করছে। খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করতে পারে এবং ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন—মানবিক কর্মীরা কোনো লক্ষ্যবস্তু নয়, যুদ্ধাবস্থা অবিলম্বে শেষ করা উচিত।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

বিশ্ব সম্প্রদায় বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও ইসরাইলি সরকার তা উপেক্ষা করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার মানুষের ওপর চালানো এই সামরিক অভিযান গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।


উপসংহার

গাজায় প্রতিদিন বেড়ে চলা মৃত্যুর মিছিল বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। নিরীহ মানুষদের প্রাণহানি, ত্রাণকর্মীদের মৃত্যুঝুঁকি, শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস—সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এখনই যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তবে এই মানবিক বিপর্যয় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এক অধ্যায় হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *