সাংস্কৃতিক ভিন্নতাই আমাদের শক্তি: ফারুকী

সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বিশ্ব সাংস্কৃতিক নীতি ফোরামে বক্তব্য দিচ্ছেন স্পেনে অনুষ্ঠিত মনডিয়াকাল্ট-২০২৫ ফোরামে বক্তব্য রাখলেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি উপদেষ্টা, ছবি :বাসস

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সাংস্কৃতিক ভিন্নতাগুলোকে আর বিভাজনের উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং শক্তি হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। তিনি এ কথা বলেন স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী বিশ্ব সাংস্কৃতিক নীতি ফোরামের (মনডিয়াকাল্ট-২০২৫) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।

এই আন্তর্জাতিক আসরে বিশ্বের শতাধিক সংস্কৃতি মন্ত্রী ও নীতিনির্ধারক অংশ নিচ্ছেন। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সাঞ্চেজ আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরামটির উদ্বোধন করেন।


সাংস্কৃতিক বিভাজন থেকে অন্তর্ভুক্তির পথে

ফারুকী বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সাংস্কৃতিক বিভাজন দীর্ঘদিন ধরে সমাজকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার সেই ক্ষত সারাতে বদ্ধপরিকর।

  • সরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে।
  • সম্প্রতি নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ শোভাযাত্রায় দেশের সব জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ তার বড় প্রমাণ।
  • তিনি উল্লেখ করেন, ৫৪ বছরের ইতিহাসে এটি প্রথমবার ঘটেছে।

ধর্মীয় উৎসবে নিরপেক্ষ নীতি

সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন:

  • ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সরকার নিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক নীতি অনুসরণ করছে।
  • এ বছর দুর্গাপূজা, ঈদ ও বুদ্ধ পূর্ণিমায় নেওয়া উদ্যোগ তার বড় উদাহরণ।
  • এতে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহাবস্থান দৃঢ় হচ্ছে।

উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও সাংস্কৃতিক কনটেন্ট

ফারুকী আরও বলেন, সাংস্কৃতিক খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও ওটিটি মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কনটেন্ট প্রচার বাড়ানো হচ্ছে।
  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ খাতে বিনিয়োগ ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বাংলাদেশের উদ্যোগকে ফিনল্যান্ড, প্যারাগুয়ে, মাল্টা ও পোল্যান্ডের সংস্কৃতি মন্ত্রীরা প্রশংসা করেন। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে শক্তি হিসেবে ব্যবহারের যে দৃষ্টান্ত তৈরি করছে, তা অনেক দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে।


বিশ্ব ফোরামের তাৎপর্য

  • মনডিয়াকাল্ট-২০২৫ হচ্ছে বিশ্বের সাংস্কৃতিক নীতি নির্ধারকদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
  • শতাধিক দেশের অংশগ্রহণে বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ।
  • আগামী ১ অক্টোবর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে এ আসরের সমাপ্তি হবে।

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কূটনীতি

বাংলাদেশ এই ফোরামে শুধু অংশগ্রহণই করছে না, বরং সাংস্কৃতিক কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বকে জানাচ্ছে—

  • ভিন্নতা মানেই বিভাজন নয়;
  • বরং ভিন্নতা থেকেই গড়ে ওঠে সৃজনশীলতা ও সহাবস্থান।
    ফারুকীর মতে, এটাই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য শক্তির উৎস।

বাংলাদেশ আজ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে বিভেদ নয়, বরং জাতীয় শক্তির উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে হাঁটছে। বৈশ্বিক পরিসরে এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই হচ্ছে সরকারের মূল লক্ষ্য। স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত ফোরামে বাংলাদেশের বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *