অনলাইন ডেস্ক:
নিউইয়র্ক, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ :
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিনিয়োগকারী এবং প্রযুক্তি বিশ্বের সুপরিচিত মুখ ইমরান খান। স্ন্যাপচ্যাটের সাবেক প্রধান কৌশলগত কর্মকর্তা (সিএসও) ইমরান খান সাক্ষাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ
নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শনিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ইমরান খান বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ এখন আগের তুলনায় আরও সহায়ক এবং সময়টিও বিনিয়োগের জন্য যথাযথ। তিনি বিশেষভাবে ফিনটেক খাতের দ্রুত বিকাশের প্রশংসা করেন এবং বলেন— “বাংলাদেশ একটি ফ্রন্টিয়ার মার্কেট। তরুণ জনগোষ্ঠী বিশাল এবং সুযোগ সীমাহীন।”
অধ্যাপক ইউনূস বিনিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, ফিনটেক ও সামাজিক ব্যবসা খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এখন উদ্দীপনামূলক সময় অতিক্রম করছে এবং নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ অপরিহার্য।
ইমরান খানের কর্মজীবনের উজ্জ্বল ইতিহাস
বর্তমানে ৪৮ বছর বয়সী ইমরান খান কিশোর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। জেপি মরগান ও ক্রেডিট সুইসে বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে তিনি দ্রুত খ্যাতি অর্জন করেন।
বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসেন আলিবাবার রেকর্ড ভাঙা আইপিও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার মাধ্যমে। পরবর্তীকালে স্ন্যাপচ্যাটের সিএসও হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই কোম্পানির বাজারমূল্য শূন্য থেকে ৭২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন।
২০১৮ সালে তিনি ‘প্রাইম অ্যাসেট’ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা প্রযুক্তিনির্ভর খাতে বিশেষ বিনিয়োগ করে। তাঁর পোর্টফোলিওতে রয়েছে পেমেন্টস, ডিজিটাল অবকাঠামোসহ ফিনটেকের নানা খাত। বর্তমানে তিনি আলেফ হোল্ডিং-এর বোর্ড চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা
সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক ইউনূস ইমরান খানকে শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যেন তিনি নিজ চোখে বিনিয়োগ সম্ভাবনা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ইমরান খানও আগামী মাসগুলোতে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনার কথা জানান।
তিনি ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বলেন— “আমি আপনার কাজের একজন বড় ভক্ত। আপনি আমাদের জাতীয় গর্ব।”
সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন তাঁদের মোট বিনিয়োগের অন্তত এক শতাংশ সামাজিক ব্যবসায় ব্যয় করেন অথবা সমমনাদের অংশগ্রহণে একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠন করেন। ইমরান খান এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং এতে ভবিষ্যতে সম্পৃক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন— “বাংলাদেশের তরুণদের জন্য আপনার মতো রোল মডেল প্রয়োজন। দেশে এখন উদ্দীপনামূলক সময় চলছে—আপনি নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।”
উপস্থিতি
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষণ: কেন গুরুত্বপূর্ণ এই সাক্ষাৎ?
১. বাংলাদেশে বৈশ্বিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা – নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগ পরিবেশ ইতিবাচক হয়ে উঠেছে।
২. ফিনটেক খাতে দ্রুত প্রবৃদ্ধি – তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশকে ফিনটেকের অন্যতম আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৩. ইমরান খানের অভিজ্ঞতা – বিশ্ব প্রযুক্তি খাতে তাঁর অভিজ্ঞতা ও সফলতা বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগ প্রবাহ আনতে সক্ষম।
৪. সামাজিক ব্যবসার প্রসার – ইউনূসের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সামাজিক ব্যবসায় সম্পৃক্ত হলে তা দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী ইমরান খানের এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। ফিনটেকসহ প্রযুক্তি-নির্ভর খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ানোর পাশাপাশি এটি দেশের তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।
