দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে দুর্ভোগ চরমে, পাঁচটি ঘাট অচল — থেমে গেছে আধুনিকায়ন প্রকল্প

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে অচল পন্টুনের কারণে দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তিতে যাত্রী ও চালকরা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অচলাবস্থায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট, থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক যাত্রা। ছবি সংগ্রহীত

অনলঅইন ডেস্ক:

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট আজ যেন অবহেলার প্রতীক। সাতটি ফেরিঘাটের মধ্যে পাঁচটি দীর্ঘদিন ধরেই অচল, আর বাকি দুটি ঘাট চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী, চালক এবং পণ্যবাহী পরিবহনের চালকদের পড়তে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগে।

ঘাটের অচলাবস্থা ও যানজট

গত সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে পাটুরিয়া থেকে রওনা হয়ে রো রো ফেরি শাহ পরান প্রচণ্ড বেগে দৌলতদিয়া ৩ নম্বর ঘাটের পন্টুনে ধাক্কা দেয়। এতে পন্টুনের কবজা ভেঙে যায় এবং ঘাটটি অচল হয়ে পড়ে। পরদিন সকালেই দৌলতদিয়া প্রান্তে তিন কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই লাইন আরও লম্বা হতে থাকে।

এক পর্যায়ে শুধুমাত্র ৪ নম্বর ঘাট সচল থাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাত্রীবাহী পরিবহন ও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন পারাপার করা হলেও সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক ঘাট পার হতে পারেনি। দীর্ঘ অপেক্ষায় যাত্রীদের সঙ্গে চালকদেরও ভোগান্তি চরমে ওঠে।

বুধবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ৩ নম্বর ঘাট মেরামত করার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সামগ্রিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।

প্রতিদিনের যানবাহন পারাপার

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারেরও বেশি যানবাহন পারাপার হয়। বর্তমানে ১০টি ফেরি চলাচল করলেও ঘাট অচল থাকায় এ নৌরুটে স্বাভাবিকতা ফিরছে না।

স্থানীয় পরিবহন চালক পলাশ মোল্লা বলেন,

“দৌলতদিয়ায় মাত্র দুইটি ফেরিঘাট সচল আছে। এর মধ্যে একটি মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যায়। এতে আমাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। অন্তত ৪-৫টি ফেরিঘাট সচল থাকলে ভালো হতো।”

আধুনিকায়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া

প্রসঙ্গত, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট আধুনিকায়নের জন্য পাঁচ বছর আগে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এতে ঘাটগুলোকে আধুনিক সুবিধা ও টেকসই অবকাঠামো দিয়ে তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল। তবে অজানা কারণে সেই প্রকল্প বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ঘাটের পুরনো যন্ত্রাংশ ও অবকাঠামো বারবার বিকল হচ্ছে। ফেরির ধাক্কায় পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াও নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ

ঘাট এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে করতে খাবার, বিশ্রাম ও নিরাপত্তাহীনতার সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।

অনেকে জানান, ঘাটে টানা যানজটের কারণে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারেও।

পুরনো সমস্যার পুনরাবৃত্তি

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে সমস্যা নতুন নয়। নদীভাঙন কিংবা দুর্ঘটনার কারণে প্রায়ই কোনো না কোনো ঘাট বন্ধ হয়ে পড়ে। তখন পুরো রুটে পরিবহন সংকট সৃষ্টি হয়। পণ্যবাহী ট্রাক থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী পরিবহন—সবাইকে একই দুর্ভোগে পড়তে হয়।

করণীয় কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে হলে অবিলম্বে আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। একসঙ্গে অন্তত চার থেকে পাঁচটি ঘাট সচল রাখা না গেলে যাত্রী ও পরিবহন চালকদের দুর্ভোগ কমবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *