ডাকসু ভিপি নির্বাচনে সাদিক কায়েমকে বিপুল ভোটে এগিয়ে: আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অপেক্ষায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে সাদিক কায়েম ভোট উৎসবে ছবি: ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সাদিক কায়েমের সমর্থকদের উচ্ছ্বাস—ভোটের আবহে DU ক্যাম্পাস। ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম নির্বাচিত বলে প্রাথমিকভাবে ফলাফলে দেখা যাচ্ছে। যদিও এখনও আনুষ্ঠানিক বিজয় ঘোষণা করা হয়নি, চূড়ান্ত গণনায় তিনি উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

ভোটের ফলাফল ও পরিসংখ্যান

চূড়ান্ত ভোটের হিসাব অনুযায়ী, সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪,০৪২ ভোট, যেখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, ছাত্র সরকারের সমর্থিত আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫,৬৫৮ ভোট। এই ব্যবধান প্রায় ৮,৩৮৪ ভোট, যা একাধারে বড় জয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থী উমামা ফাতেমা, যারা পেয়েছেন ২,৫৪৯ ভোট। শামীম হোসেন (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ২,৩৮৫ ভোট, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থী আব্দুল কাদের পেয়েছেন ৬৬৮ ভোট, এবং প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ (ইমি) পেয়েছেন মাত্র ১১ ভোট

সারসংক্ষেপে:

  • সাদিক কায়েম: ১৪,০৪২ ভোট
  • আবিদুল ইসলাম খান: ৫,৬৫৮ ভোট
  • উমামা ফাতেমা: ২,৫৪৯ ভোট
  • শামীম হোসেন: ২,৩৮৫ ভোট
  • আব্দুল কাদের: ৬৬৮ ভোট
  • শেখ তাসনিম আফরোজ: ১১ ভোট

প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া ও আপত্তি

নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরেই আবিদুল ইসলাম খান এবং উমামা ফাতেমা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবিদুল অভিযোগ করেছেন ভোট গ্রহণ ও গণনার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে। উমামা ফাতেমা বলছেন, ফলাফলে গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতা অনুপস্থিত।

অন্যদিকে আব্দুল কাদের, যিনি বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী প্যানেলের প্রার্থী, বলেছেন “নির্বাচনে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে” এবং “কারচুপির গুরুতর অভিযোগ” তুলেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের মাঠে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

নির্বাচনের পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট

টানা দুই দিন ধরে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টায় ফল ঘোষণার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়। সবগুলো হলে বিপুল ব্যবধানে জয় পেলেও, জগন্নাথ হলে সাদিক কায়েম পান মাত্র ১০ ভোট, যেখানে আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ১,২৭৬ ভোট। এর ফলে মূলত এই হল নির্বাচন নাটকীয় করেছিল।

প্রসঙ্গত, ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোট ৮টি কেন্দ্র ও ৮১০টি বুথে ডাকসু এবং হল সংসদের ভোট পরিচালিত হয়। এবারের ভোটার সংখ্যা ছিল ৩৯,৮৭৪ জন—তাঁদের মধ্যে ৫টি ছাত্রী হলে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮,৯৫৯, আর ১৩টি ছাত্র হলে ছিল ২০,৯১৫। এছাড়াও, ডাকসে ২৮টি পদে মোট ৪৭১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন; হল সংসদ পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বীরা ছিলেন ১,০৩৫ জন, মোট পদের সংখ্যা ২৩৪ (প্রতি হলে ১৩)—ফলে ভোটারদের মোট ৪১টি ভোট দিতে হয়েছিল।

প্রার্থীর পরিচিতি ও পছন্দের কারণ

জয়ের পথে থাকা সাদিক কায়েম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। নির্বাচনের আগেই তিনি ছাত্রদলের সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে “অনিয়ম” ও “অনৈতিক সুবিধা” বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন।

নির্বাচনে তার জয় অনেকটাই স্বতন্ত্র নয়, বরং এর পেছনে আছে সংগঠনের শক্তিশালী ভিত্তি, সক্রিয় জনমত, এবং হয়তো প্রশাসন-শিবির দুই পক্ষের মধ্যেকার গাণিতিক হিসাবের প্রতিফলন।

ভবিষ্যৎ চিন্তার দিক

যদিও প্রাথমিকভাবে ফলাফলে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হিসেবে দেখা গেলেও, আনুষ্ঠানিক বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত সূতরাং রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আপত্তির পর্যায়ে পরিস্থিতি রয়েই। নির্বাচনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষ গণনা, এবং সহ-মত প্রক্রিয়া—এই তিনটি বিষয় এখন প্রথম সারিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

সাদিক কায়েমের জয়ের ধাপটি স্বাস্থ্যকর বলে মনে হলেও, এর পুরোপুরি স্বীকৃতি পেতে হলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা, আপত্তির সমাধান, এবং ফলাফলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। আশা করা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী সংগঠনগুলো এই দিকগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *