আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুললেন সারজিস আলম

সারজিস আলম পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছেন পঞ্চগড়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বক্তব্য রাখছেন সারজিস আলম, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

পঞ্চগড়ে এক আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে একই সূত্রে গাঁথা উল্লেখ করে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জেলা শহরের কুলি শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ দাবি তোলেন। বক্তৃতায় তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এক চোর দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আরেক চোর এখন সেই ব্যানারে আশ্রয় খুঁজছে।”

আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি নিয়ে কড়া সমালোচনা

সারজিস আলম বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস চুরি, দুর্নীতি ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তার দাবি, জাতীয় পার্টি আসলে আওয়ামী লীগেরই প্রতিফলন—একটি ‘রিফাইন্ড’ সংস্করণ। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতের পরামর্শে এই রাজনৈতিক নাটক সাজানো হয়েছে, যাতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে পুরনো শক্তিগুলো টিকে থাকতে পারে।

তার মতে, “যারা বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, শাপলা চত্বরে আলেম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে এবং হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যা করেছে, তারা কোনোভাবেই রাজনীতি করার অধিকার রাখে না। আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, জাতীয় পার্টিরও কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান

সারজিস আলম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। তার মতে, “ফ্যাসিস্টদের প্রতি নমনীয় আচরণ জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করছে। সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত খুনিদের বিচারের মঞ্চে দাঁড় করানো।”

তিনি আরও সতর্ক করেন যে, এ দেশে অপরাধী বা খুনি রাজনৈতিক শক্তিকে কোনোভাবেই বৈধতা দেওয়া যাবে না।

ছাত্ররাজনীতি নিয়ে অভিযোগ

পঞ্চগড়ে ছাত্রদল স্কুল পর্যায়ে কমিটি গঠন করছে বলে অভিযোগ করেন সারজিস আলম। তার মতে, এই প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের অপরাজনীতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়ানো হবে।

শ্রমিকদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি

মতবিনিময় সভায় শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা শ্রমজীবী মানুষের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকব। আপনাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে জাতীয় নাগরিক পার্টি সবসময় কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়াবে।”

তিনি শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে শ্রমিকবান্ধব নীতি গ্রহণে বাধ্য করা হবে।

প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সম্পর্ক বিতর্কিত। বিরোধী শক্তিগুলোর অভিযোগ, দুই দলই পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে এসেছে। সারজিস আলমের সাম্প্রতিক মন্তব্যে আবারও সেই বিতর্ক নতুনভাবে সামনে এসেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন দাবি গণআন্দোলনকে আরও উসকে দিতে পারে। একদিকে সরকারবিরোধী নানা আন্দোলন, অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ—সব মিলিয়ে দেশের রাজনীতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

জনগণের প্রত্যাশা

সাধারণ মানুষ এখন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাজনীতি প্রত্যাশা করে। তারা আর চায় না ক্ষমতার পালাবদল কেবল চুরি ও দুর্নীতির মাধ্যমে হোক। সারজিস আলমের দাবি—যদি সত্যি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে চায়, তবে যেকোনো অপরাধী রাজনৈতিক শক্তিকে আইন ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *