আওয়ামী লীগের প্রতীক স্থগিত: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত – ইসির বার্তা

আওয়ামী লীগের প্রতীক স্থগিত, ইসির ঘোষণায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। ইসির সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়লো, ছবি সংগ্রহীত

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই সঙ্গে অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত এবং দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।

ইসির স্পষ্ট বার্তা

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,
“কোনো দলের কার্যক্রম স্থগিত থাকলে তাদের প্রতীকও স্থগিত থাকবে। ফলে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।”

তিনি আরও যোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতীক ছাড়া কেউ দাঁড়াতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলে দেবে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না হলে দলটি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

প্রতীক ছাড়া অংশগ্রহণের প্রশ্ন

বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে দলীয় প্রতীক একটি বড় ভূমিকা রাখে। কারণ, ভোটাররা দীর্ঘদিন ধরে প্রতীকভিত্তিক ভোট দেওয়ার সঙ্গে অভ্যস্ত। তাই দলীয় প্রতীক ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে ভোটের ফলাফলে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়তে পারে।

আওয়ামী লীগের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। কিন্তু নিবন্ধন স্থগিতের কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক হতাশা ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে দলটি প্রতীক হারালে সমর্থকগোষ্ঠী বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইসির অবস্থান ও আরপিও সংশোধন

নির্বাচন কমিশন (ইসি) বর্তমানে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের কাজে ব্যস্ত। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কমিশনের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। এর মধ্যেই ইসি সানাউল্লাহর বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, কোনো দল নিষিদ্ধ বা স্থগিত অবস্থায় থাকলে তারা কোনোভাবেই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক দৃষ্টি

জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রতিবেশী ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিবিড়ভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির নির্বাচন থেকে বাদ পড়া দেশি-বিদেশি নীতিনির্ধারকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভোটারদের প্রতিক্রিয়া

ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, একটি বড় রাজনৈতিক শক্তিকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন, আইন ও বিধির বাইরে গিয়ে কোনো দলকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

ইসির এই অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সামনে এখন দুইটি পথ খোলা— হয় নিবন্ধন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করাতে হবে, নয়তো দলীয় প্রতীক ছাড়াই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। যে পথেই হোক, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব গভীর হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *