অনলাইন ডেস্ক:
চাঁদপুর থেকে মাদক নির্মূলে একজোট: র্যালি ও আলোচনা সভায় দৃঢ় প্রত্যয়
চাঁদপুর, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – সমাজ থেকে মাদক নির্মূলের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে চাঁদপুরের ১২ নং চান্দ্রা ইউনিয়নে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো এক বিশাল মাদকবিরোধী র্যালি ও আলোচনা সভা। স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এই আয়োজনটি একটি অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে। এই ধরনের জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজ থেকে মাদকের মতো ভয়াবহ ব্যাধি দূর করা সম্ভব বলে উপস্থিত সকলেই একমত হন।
পুলিশের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতা
সকাল ১০টায় ইউনিয়নের প্রধান সড়ক থেকে একটি বিশাল র্যালি শুরু হয়। এতে পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ অংশ নেন। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা “মাদককে না বলুন, জীবন বাঁচান”, “মাদকমুক্ত সমাজ গড়ব, সুস্থ জীবন ফিরিয়ে আনব” এবং “মাদকদ্রব্য পরিহার করি, সোনালি ভবিষ্যৎ গড়ি” – এই ধরনের স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে হেঁটে যান। র্যালিটি এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাদকবিরোধী আন্দোলনের বার্তাটি সকলের কাছে পৌঁছে দেয়।
র্যালি শেষে চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ্ব আনোয়ার উল্যাহ পাটোয়ারী। তার সভাপতিত্বে এবং এডভোকেট মোঃ শাহজাহান খান এর সঞ্চালনায় সভাটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব মাদকের ভয়াবহতা এবং এর বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মাদক সমাজের মূল ভিত্তিকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটি কেবল একটি আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। পুলিশ সর্বদা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু সমাজের প্রতিটি পরিবারের উচিত তাদের সন্তানদের প্রতি নজর রাখা এবং তাদের মাদকের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করা।”
বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দের মূল্যবান বক্তব্য
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুকুর চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল), চাঁদপুর, আনোয়ার হোসেন সাইদী, সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ), শারমিন রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ), মোঃ বাহার মিয়া, অফিসার ইনচার্জ, চাঁদপুর সদর মডেল থানা এবং মুঃ মিজানুর রহমান, সহকারী পরিচালক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চাঁদপুর।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকুর চাকমা তার বক্তব্যে বলেন, “মাদকাসক্তি একটি মানসিক ও শারীরিক রোগ। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা অপরিহার্য। আমরা আমাদের যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর।”
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুঃ মিজানুর রহমান মাদক পাচার, সরবরাহ এবং সেবনের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে এবং আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।”
এছাড়াও, স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকগণ তাদের বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে রাখতে নৈতিক শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজে আগ্রহ বাড়ানো গেলে মাদকের দিকে তাদের ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা অনেকটাই কমবে।
ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের অঙ্গীকার
আলোচনা সভায় উপস্থিত বক্তাগণ এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ একমত হন যে, মাদক নির্মূলের জন্য শুধু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভরশীল থাকা যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ। সভায় সকলে মিলে মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব আনোয়ার উল্যাহ পাটোয়ারী বলেন, “আমাদের ইউনিয়নকে মাদকমুক্ত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখব। প্রতিটি পরিবারকে মাদকের বিরুদ্ধে দুর্গ তৈরি করতে হবে।”
সভা শেষে অংশগ্রহণকারীরা মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার শপথ গ্রহণ করেন। এই র্যালি এবং সভা শুধু একটি প্রতীকী আয়োজন ছিল না, বরং এটি ছিল সমাজ থেকে মাদক নামের অভিশাপকে চিরতরে বিদায় জানানোর একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। এই ধরনের উদ্যোগ দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়লে একটি মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।
