অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন দূত: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন
ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ – যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের জন্য নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে মনোনীত করেছেন। পেশাদার কূটনীতিক ক্রিস্টেনসেন, যিনি পূর্বে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক বিভাগের কাউন্সেলর হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন, এখন ‘অ্যাম্বাসেডর এক্সট্রাঅর্ডিনারি অ্যান্ড প্লেনিপোটেনশিয়ারি’ পদে যোগদানের জন্য প্রস্তুত। এই মনোনয়ন বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সিনেটের অনুমোদন অপরিহার্য
হোয়াইট হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের মনোনয়ন মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন সিনেটে পাঠানো হয়েছে। এই পদে চূড়ান্তভাবে যোগদানের জন্য তাকে অবশ্যই সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে। হোয়াইট হাউসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগও এই মনোনয়নের খবর নিশ্চিত করেছে। সাধারণত, সিনেট কমিটির শুনানির পর ভোটাভুটির মাধ্যমে রাষ্ট্রদূতের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, পিটার হাসের অবসরের পর থেকে বাংলাদেশে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন তার দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
কে এই ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন?
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন একজন দীর্ঘদিনের পেশাদার কূটনীতিক এবং তার কর্মজীবনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে কর্মরত। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে একটি হলো ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে রাজনৈতিক বিভাগের কাউন্সেলর হিসেবে কাজ করা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তার এই গভীর জ্ঞান তাকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এছাড়াও, তিনি ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত কমান্ডের কমান্ডারের বৈদেশিক নীতি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময়ে তিনি বৈশ্বিক কৌশলগত প্রতিরোধ মিশনের বৈদেশিক নীতি প্রভাব বিষয়ে সরাসরি পরামর্শ দিতেন। তার এই অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও কৌশলগত বিষয়ে তার দক্ষতা প্রমাণ করে।
প্রেক্ষাপট: স্থিতিশীল সম্পর্ক ও নতুন চ্যালেঞ্জ
পিটার হাসের অবসরের পর থেকে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রদূতের পদটি শূন্য ছিল। ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও, একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও গতিশীল করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে, বর্তমানে যখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ধরনের ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তখন বাংলাদেশের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে তার পরিচিতি, তাকে এই কঠিন দায়িত্ব পালনে বাড়তি সুবিধা দেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধুমাত্র রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক নয়, বরং নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক সহায়তা এবং রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায়ও গুরুত্বপূর্ণ। তার নিয়োগের ফলে এই ক্ষেত্রগুলোতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার হতে পারে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের নিয়োগ দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। যেহেতু তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বে থেকেই অবগত, তাই তাকে নতুন করে প্রেক্ষাপট বুঝতে সময় দিতে হবে না। এর ফলে, তিনি দ্রুততার সাথে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবেন। বিশেষ করে, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপর তিনি গুরুত্ব দিতে পারেন।
এছাড়াও, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়ানো তার প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তার ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সর্বোপরি, ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনের মনোনয়ন বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এখন অপেক্ষা, মার্কিন সিনেটের অনুমোদনের এবং এরপর বাংলাদেশে তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণের। এই নতুন অধ্যায় দুই দেশের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হয়, তা সময়ই বলে দেবে।
