ঢাকার বাতাস আজ: সহনীয় মানে থাকলেও সচেতন থাকা জরুরি

ঢাকা এবং বিশ্বের কিছু শহরের শীর্ষ বায়ুদূষণ মান—IQAir-এর র‍্যাংকিং, যেখানে ঢাকা ‘মাঝারি’ অবস্থানে এবং কামপালা শীর্ষে। IQAir-এর তথ্যে শুক্রবার সকাল ১০:৩০ মিনিটে ঢাকা আন্তর্জাতিক বায়ুমানের ‘মাঝারি’ (AQI ৭১) অবস্থানে, যেখানে সবচেয়ে দূষিত অবস্থানে রয়েছে উগান্ডার রাজধানী কামপালা (AQI ১৬৯)

অনলাইন ডেস্ক:

ঢাকা আজ বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৪১তম

তারিখ: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার


ভূমিকা

বায়ুদূষণ এখন পৃথিবীর বড়তম স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি। ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলাবালি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের প্রতিটি মেগাসিটি প্রতিনিয়ত দূষণের কবলে পড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল নগরী ঢাকা শহরও এর বাইরে নয়। তবে আশার কথা হলো—কিছুটা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার বায়ুমান উন্নতির দিকে রয়েছে।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান IQAir জানিয়েছে, ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) স্কোর ছিল ৫৬। এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ৪১তম অবস্থানে রয়েছে। যদিও সাধারণত শীতকালে ঢাকার AQI ২০০–৩০০-এর মধ্যে ওঠানামা করে, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ বা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তুলনামূলকভাবে আজকের পরিস্থিতি অনেকটাই সহনীয় বলা চলে।


একিউআই কী?

এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা AQI হলো একটি সূচক, যা বাতাসে দূষণকারী কণার মাত্রা বোঝায়। সাধারণত PM2.5, PM10, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড এবং ওজোনের ঘনত্ব মাপা হয়।

  • ০ থেকে ৫০: ভালো
  • ৫১ থেকে ১০০: মাঝারি বা সহনীয়
  • ১০১ থেকে ১৫০: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর
  • ১৫১ থেকে ২০০: অস্বাস্থ্যকর
  • ২০১ থেকে ৩০০: খুব অস্বাস্থ্যকর
  • ৩০১ থেকে ৪০০: ঝুঁকিপূর্ণ

আজকের স্কোর ৫৬, যা ৫১–১০০-এর মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ ঢাকার বাতাস এখন মাঝারি বা সহনীয়


বিশ্বে কোন শহর সবচেয়ে দূষিত?

আজ সকাল সাড়ে ৭টার তথ্য অনুযায়ী:

  1. দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত – স্কোর ১৮১ (সবচেয়ে দূষিত)
  2. কিনশাসা, কঙ্গো – স্কোর ১৭২
  3. কামপালা, উগান্ডা – স্কোর ১৫২
  4. জাকার্তা, ইন্দোনেশিয়া – স্কোর ১৪৭
  5. কায়রো, মিশর – স্কোর ১৪০

এই তালিকায় ঢাকা ৪১তম অবস্থানে থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় রয়েছে।


কেন ঢাকার বায়ুদূষণ ঘটে?

ঢাকার বায়ুদূষণের মূল কারণগুলো হলো—

  1. যানবাহনের ধোঁয়া – ডিজেল ও অকটেনচালিত গাড়ির ধোঁয়া বায়ুমানের জন্য বড় হুমকি।
  2. ইটভাটা – শহরের আশপাশে হাজার হাজার ইটভাটার কারণে বায়ুদূষণ বেড়ে যায়।
  3. নির্মাণকাজের ধুলাবালি – সারা বছরজুড়ে চলা নির্মাণকাজ থেকে ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়ে।
  4. শিল্পকারখানা – অপ্রয়োজনীয় গ্যাস নির্গমন ও শিল্পবর্জ্য বাতাসকে দূষিত করে।
  5. ঋতুভিত্তিক প্রভাব – শীতকালে বাতাস স্থবির হয়ে পড়ে, ফলে দূষণ জমে যায়।

আজকের পরিস্থিতি: স্বস্তির বাতাস নাকি অদৃশ্য হুমকি?

ঢাকার বাতাস আজকে ‘সহনীয়’ মানে থাকলেও সেটি একেবারে নিরাপদ নয়। WHO-এর হিসাব অনুযায়ী, আজকের PM2.5 এর মাত্রা WHO-এর মানদণ্ডের চেয়ে প্রায় ৩ গুণ বেশি। অর্থাৎ শিশু, প্রবীণ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ।


স্বাস্থ্যঝুঁকি ও করণীয়

যাদের জন্য ঝুঁকি বেশি:

  • শিশু
  • বয়স্ক মানুষ
  • হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিস রোগী
  • গর্ভবতী নারী

করণীয়:

  • বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • সকালে দৌড়ানো বা বাইরের ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
  • জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন, ঘরের ভেতরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা উত্তম।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

বিশেষজ্ঞ মতামত

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাময়িক উন্নতি হলেও এটি টেকসই নয়। যানবাহনের নির্গমন কমানো, গণপরিবহন উন্নত করা, শিল্পকারখানা নিয়ন্ত্রণ করা এবং সবুজায়ন বাড়ানো ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংস্থার (DoE) একজন কর্মকর্তা বলেন—

“ঢাকার বাতাস একদিন ভালো হলে আরেকদিন খারাপ হয়ে যায়। এটি কোনো স্থায়ী উন্নতির ইঙ্গিত নয়। টেকসই সমাধানের জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।”


তুলনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি

ঢাকার AQI যখন ৫৬, তখন দিল্লি প্রায়ই ২০০–২৫০ এ থাকে। বেইজিং ১৫০–২০০ এর মধ্যে ওঠানামা করে। নিউ ইয়র্ক বা লন্ডনে সাধারণত AQI ৫০-এর নিচে থাকে।

অর্থাৎ, ঢাকা আজকের দিনে তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় থাকলেও, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর শহরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার মতো পর্যায়ে আসেনি।


সমাধানের পথ

  • ইটভাটা আধুনিকায়ন ও নিয়ন্ত্রণ
  • গণপরিবহন উন্নয়ন
  • ইলেকট্রিক যানবাহন চালু
  • শিল্পকারখানায় নির্গমন নিয়ন্ত্রণ
  • বৃহৎ পরিসরে বৃক্ষরোপণ
  • নির্মাণকাজে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

উপসংহার

ঢাকার বাতাস আজকে তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক হলেও এ স্বস্তি সাময়িক। সচেতনতা, সরকার ও জনগণের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এ অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয়। আজকের ‘সহনীয়’ মানে আমাদের আশা জাগালেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই সমাধান তৈরি করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *