আফগানিস্তানে শক্তিশালী ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ৫০০, আহত সহস্রাধিক

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত ঘরবাড়ি এবং শোকার্ত মানুষ। কুনারসহ একাধিক প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি, ছবি তালেবান সরকার

অনলাইন ডেস্ক:

ভয়াল রাতের ভূমিকম্প

আফগানিস্তান আবারও কেঁপে উঠল ভয়াবহ ভূমিকম্পে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কুনার প্রদেশে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ। রোববার (৩১ আগস্ট) রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে স্থানীয় সময় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল জালালাবাদ থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে, ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে।

কেবল একটি রাতেই আফগানিস্তানকে নতুন করে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হলো। এর আগে গত বছর অক্টোবর মাসেও ভয়াবহ ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল।


আফগান সরকারের প্রতিক্রিয়া

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আরটিএ জানায়, ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৫০০ ছাড়িয়েছে। তবে তালেবান-নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এখনও সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন,

“আজ রাতের ভূমিকম্পে দুঃখজনকভাবে আমাদের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি প্রদেশে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও বাসিন্দারা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন, এবং কেন্দ্রীয় ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশ থেকে উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে।”


সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

স্থানীয় কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে—

  • কুনার প্রদেশের নুর গাল, সাওকি, ওয়াটপুর, মানোগি ও চাপা দারা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
  • কেবল একটি গ্রামেই অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
  • লাঘমানে ৮০ জন এবং নানগারহারে ৩৩০ জন আহত হয়েছেন।

উদ্ধারকাজে বাধা

ভূমিকম্পের পরবর্তী সময়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

  • সাওকি জেলার দেওয়া গুল এবং নূর গুল জেলার মাজার দারা যাওয়ার সড়ক ভূমিধসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
  • ফলে ত্রাণ ও উদ্ধারকারী দলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারছে না।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দূরবর্তী গ্রামগুলোর সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা যায়নি। তাই হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ভূমিকম্পের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলো বলছে, আফগানিস্তান ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক সংকটে রয়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের অভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। তার ওপর এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলবে।


সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ইতিহাস

আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ।

  • ২০২৩ সালের অক্টোবরে হেরাত প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন।
  • গত দুই দশকে দেশটিতে একাধিক শক্তিশালী ভূমিকম্পে লাখো মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্বতময় ভূপ্রকৃতি ও অস্থিতিশীল ভূতাত্ত্বিক অবস্থার কারণে আফগানিস্তান বারবার ভূমিকম্পের কবলে পড়ে।


মানবিক বিপর্যয়

ভূমিকম্পে শুধু প্রাণহানিই নয়, ধ্বংস হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। হাজার হাজার মানুষ রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আহতদের অনেকেই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। দূরবর্তী এলাকায় চিকিৎসা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলো ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ চিত্র এখনও জানা সম্ভব হয়নি।


উপসংহার

আফগানিস্তান আবারও দাঁড়িয়ে গেছে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। নিহতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, আহতদের অবস্থা শোচনীয়। এখন আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া দেশটির পক্ষে এই দুর্যোগ মোকাবিলা প্রায় অসম্ভব। আফগানিস্তানের জন্য প্রয়োজন জরুরি ত্রাণ সহায়তা, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান—এই দুঃসময়ে আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানো।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *