অনলাইন আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। প্রত্যাশা ও পূর্বাভাসকে পিছনে ফেলে তারা পেয়েছে দুই শতাধিক আসন, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিজয়ের একটি। এ জয়ের রেশ ধরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি West Bengal বিধানসভা নির্বাচনের দিকে নজর দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “বিহারের বিজয় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জয়ের পথ তৈরি করবে।”
বিহারের নির্বাচনে পাল্টে গেল সমীকরণ
২৪৩ আসনের বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১২২ আসন। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, যেখানে দলের আসনসংখ্যা নিয়ে বিশ্লেষকদের ভবিষ্যদ্বাণী নানা মাত্রায় বিভক্ত ছিল—কোথাও ১৩০, কোথাও ১৬৭। কিন্তু বাস্তব ফলাফলে দেখা গেল একেবারেই ভিন্ন চিত্র। এনডিএ জোট পেয়েছে ২০২টি আসন, অন্যদিকে কংগ্রেস–আরজেডি মহাজোট পেয়েছে মাত্র ৩৫টি আসন। বাকি ৬টি আসন গেছে স্বতন্ত্র ও ক্ষুদ্র দলগুলোর দখলে।
প্রচণ্ড এই বিজয়ে আবারও প্রমাণিত হল যে ২০ বছরের টানা ক্ষমতার পরও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা জনমানসে জোরালোভাবেই রয়েছে। ভোটের হারও ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য—৬৭ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করেন দুই দফার এই নির্বাচনে। প্রথম দফা অনুষ্ঠিত হয় ৬ নভেম্বর ১২১টি আসনে এবং দ্বিতীয় দফা ১১ নভেম্বর বাকি আসনগুলোতে।
মোদির দৃষ্টি এখন পশ্চিমবঙ্গে
বিজয়ের পর দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে কর্মীদের উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন,
“বিহারের মানুষ আমাদের আশীর্বাদ দিয়েছেন। এই জয় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জঙ্গলরাজ উৎখাতের পথকে আরও মজবুত করেছে।”
মোদির বক্তব্যে স্পষ্ট, বিজেপি এখন বিহারের বিজয়কে পশ্চিমবঙ্গে তাদের প্রচারণার শক্তি হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তিনি বাংলার মানুষকে উদ্দেশ করে আরও বলেন—
“আমি বাংলার ভাই-বোনদের আশ্বস্ত করছি, এবারের ভোটে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও জঙ্গলরাজ উৎখাত হবে।”
২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন
২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৩টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে নারীর নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ, ভোটার তালিকার সংশোধন—এই সব ইস্যুতেই তাপমাত্রা বাড়ছে রাজনীতির মাঠে।
গত কয়েক বছরে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে তাদের রাজনৈতিক ভিত্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত করেছে। কিন্তু রাজ্যে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। সেই লড়াইয়ে বিহারের এই ফলাফল বিজেপিকে নতুন করে আত্মবিশ্বাস দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিহারে ভোটার তালিকা নিয়ে বিতর্ক
বিহারের নির্বাচনের আগে শুরু হয় ভোটার তালিকা সংশোধন। কিন্তু এতে বাদ পড়ে যায় ৪৭ লাখেরও বেশি নাম। বিরোধীরা অভিযোগ তোলে, এটি ছিল এনডিএ জোটকে সুবিধা দেওয়ার কৌশল। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও ফল ঘোষণার পর বলেন—
“বিজেপির পক্ষে নির্বাচন কমিশন ভোট কারচুপি করেছে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে চলছে সরগরম আলোচনা।
আগামী নির্বাচনগুলোতে বিজেপির নতুন সম্ভাবনা
আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরালা, তামিলনাড়ু, পদুচেরি ও আসামে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, বিহারের বিপুল এই জয়ে বিজেপি নতুন করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই এসব রাজ্যে সংগঠন শক্তিশালী করতে তৎপর।
এনডিএর এই জয় শুধু বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে দেয়নি, বরং জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির শক্ত অবস্থানও আরও দৃঢ় করেছে। জয় যেমন মোদির নেতৃত্বের ওপর আস্থা বাড়িয়েছে, তেমনি আগামী নির্বাচনে দলকে শক্তিশালী অবস্থানেও পৌঁছে দিয়েছে।
বিহারের ফলাফল ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে কী বার্তা দিল?
১. বিজেপি–জেডিইউ জোট এখনও জনপ্রিয়
নীতীশ কুমারের নেতৃত্বকে জনগণ আবারও সমর্থন দিয়েছে।
- জনমতের পূর্বাভাস অনেক সময় ভুল হতে পারে
সমীক্ষা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দিলেও মানুষের রায়ের দিকে কোন পক্ষ এগিয়ে, তা ফলাফলেই স্পষ্ট। - বিজেপির জাতীয় কৌশল আরও শক্তিশালী হচ্ছে
কেন্দ্র তাদের রাজনৈতিক বার্তা ও উন্নয়নমুখী প্রচারণার মাধ্যমে রাজ্যে রাজ্যে সমর্থন বিস্তৃত করছে। - অসহায় অবস্থায় কংগ্রেস–আরজেডি মহাজোট
তাদের প্রচারণায় তেমন সাড়া না পাওয়ায় ভবিষ্যতে নতুন কৌশল নিতে হবে।
বিহার নির্বাচনের ফল যেভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনকে নাড়িয়ে দিয়েছে, তা ভারতের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিজেপির আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোও এই ফল বিশ্লেষণ করে নিজেদের ভবিষ্যৎ কৌশল বদলাতে বাধ্য হবে।
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়—বিহারের এই নির্বাচন ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
