অনলাইন ডেস্ক:
৩৯ বছর পর বাড়ল ট্যারিফ
চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৯ বছর পর ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ (শুল্ক) বাড়ানো হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি—নতুন জেটি, টার্মিনাল ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় মেটাতেই এই সিদ্ধান্ত।
এই ট্যারিফ সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে।
এর আগে ব্যবসায়ীদের আপত্তিতে ১৫ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত তারিখ এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন—
“আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রতি কেজি আমদানিপণ্যে খরচ বাড়ছে মাত্র ১২ পয়সা। তাই ভোক্তা পর্যায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না।”
তিনি আরও বলেন,
“১৯৮৬ সালের পর এই প্রথম ট্যারিফ বাড়ানো হলো। তখন ডলারের দাম ছিল ৩০ টাকা, এখন ১২২ টাকা। এত বছর পর কিছুটা বাড়ানোই স্বাভাবিক।”
ব্যবসায়ীদের আপত্তি
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, কোনো আলোচনাই না করে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে।
তাদের দাবি, এতে আমদানি খরচ ও উৎপাদন ব্যয় বাড়বে—শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদেরই দাম বেশি দিতে হবে।
এফবিসিসিআইর সাবেক পরিচালক আমিরুল হক বলেন,
“একটি পণ্যে দুইবার ট্যারিফ দিতে হচ্ছে—একবার কাঁচামালে, আবার তৈরি পণ্য রফতানিতে। এতে খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে।”
কী কী খাতে ট্যারিফ বাড়ল?
- পাইলর্টিং চার্জ: ৮০০ মার্কিন ডলার
- টাগ চার্জ: ৬১৫ থেকে ৬,৮৩০ ডলার
- কনটেইনার ওঠানামা চার্জ: বেড়েছে
- বার্থে জাহাজের অবস্থান চার্জ:
- ১২ ঘণ্টা বাড়লে ১০০%
- ২৪ ঘণ্টা বাড়লে ৩০০%
- ৩৬ ঘণ্টা বাড়লে ৪০০%
- ৩৬ ঘণ্টার বেশি হলে ৯০০% পর্যন্ত চার্জ
বন্দরের আয় ও যুক্তি
২০২৪–২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরের মোট আয় ছিল ৫,২২৭ কোটি টাকা,
এর মধ্যে নিট আয় ২,৯১২ কোটি টাকা।
তবুও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন টার্মিনাল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য আরও টাকা দরকার।
তাদের যুক্তি—আগে প্রতি কেজি পণ্য থেকে ৩২ পয়সা নেওয়া হতো, এখন তা ৪৪ পয়সা।
অর্থাৎ মাত্র ১২ পয়সা বেড়েছে।
তুলনায় আমরা কোথায়?
গার্মেন্টস খাতের নেতারা বলছেন,
“ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বন্দরে খরচ অনেক কম, সেবাও দ্রুত। আমাদের বন্দর খরচে এখনো এগিয়ে নেই।”
এমনকি বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর এক ধাপ পিছিয়ে এখন ৬৮তম স্থানে।
সম্ভাব্য প্রভাব
- আমদানি ব্যয় বাড়বে
- রফতানি খরচও বাড়বে
- ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে
- গার্মেন্টস খাতে প্রতিযোগিতা কমতে পারে
বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি
ব্যবসায়ীরা চান—
সরকার ট্যারিফ পুনর্বিবেচনা করুক
ধাপে ধাপে (১০% বা ১৫%) বাড়ানো হোক
বন্দর সেবার মান বাড়ানো হোক
সারসংক্ষেপ
চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন ট্যারিফ নিয়ে দুই পক্ষের টানাপোড়েন এখনো চলছেই।
বন্দর বলছে এটি উন্নয়নের অংশ, আর ব্যবসায়ীরা বলছেন এটি ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ।
এই বিতর্কের মধ্যেই বাংলাদেশ এখন দেখতে চায়—
বন্দরের আয় বাড়বে, না কি ভোগ্যপণ্যের দামই আরও বেড়ে যাবে?
